নয়াদিল্লি: দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বিরুদ্ধে এবার তোলাবাজির অভিযোগ। সেই মর্মে তাঁর নামে FIR দায়েরের নির্দেশ দিল আদালত। সুপ্রিম কোর্ট যে নির্বাচনী বন্ডকে অসংবিধানিক ঘোষণা করেছে, সেই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে নির্মলা জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ। আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই FIR দায়েরের নির্দেশ এসেছে।(Nirmala Sitharaman Extortion Case)


'জনাধিকার সংঘর্ষ সগঠনে'র আদর্শ আইয়ার নির্মলা এবং আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ আনেন। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করতে রীতিমতো জুলুম চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত নির্মলার বিরুদ্ধে FIR দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে। বলা হয়েছে অভিযোগ খতিয়ে দেখতেও। (Electoral Bonds)


এ বছর এপ্রিল মাসে নির্মলা এবং বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ এবং ২০২২ সালে এক ব্যবসায়ীর সংস্থা থেকে মোটা আদায় দায়ের করা হয়। এক ওষুধ প্রস্তুত সংস্থাকেও বাধ্য করা হয় মোটা টাকা চাঁদা দিতে। আদর্শ সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, প্রভাবশালী অনেকে এই জুলুমবাজির সঙ্গে যুক্ত। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং আয়কর দফতরের অপব্যবহার করেছেন নির্মলা। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে দলের সিন্দুক ভরেছেন তিনি।  তোলাবাজির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এবং এতে কঠোর সাজা হওয়া উচিত বলে দাবি করেছেন আদর্শ। SBI প্রকাশিত নথিপত্র থেকে আরও অনিয়ম সামনে এসেছে বলেও দাবি তাঁর।


এখনও পর্যন্ত যা খবর, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তিলকনগর থানার পুলিশ নির্মলা এবং বাকিদের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করেছে। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে. একদিকে, নির্মলার পদত্যাগ দাবি করেছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। এ নিয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে হবে বলেও দাবি জানিয়েছেন তিনি। সিদ্দারামাইয়ার বক্তব্য, "কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উনি। তোলাবাজির অভিযোগে FIR দায়ের হয়েছে। বিজেপি ওঁকে পদত্যাগ করতে বলবে তো?"


MUDA মামলার প্রসঙ্গ টেনে সিদ্দারামাইয়া বলেন, "17A দুর্নীতির প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী, তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট দেওয়া উচিত। আমার বেলায় তো আদালত নির্দেশ দিয়েছিল। রাজ্যপাল 17A ধারায় তদন্তের নির্দেশ দেন এই মর্মে। ওঁদের বেলাতেও হবে তো? প্রধানমন্ত্রীরও তো পদত্যাগ করা উচিত! নির্মলা সীতারামন পদত্যাগ করুন,জামিনে মুক্ত কুমারস্বামীও পদত্যাগ করুন।" যদিও রাজ্য বিজেপি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলছে। এই মুহূর্তে দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার সিদ্দারামাইয়া। কংগ্রেসের অন্দর থেকেও তাঁর পদত্যাগের দাবি উঠছে। তাই সিদ্দারামাইয়া নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ গেরুয়া শিবিরের।


২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নরেন্দ্র মোদি সরকারের চালু করা নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট।  আদালতের নির্দেশে নির্বাচনী বন্ড বাবদ কোন দল ব্যবসায়ী, শিল্প সংস্থাগুলির কাছ থেকে কত টাকা চাঁদা পেয়েছে, তর তালিকা প্রকাশ করে SBI, তাতে দেখা যায়, সব মিলিয়ে BJP ৬০৬১ কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছে। তৃণমূল ১৬১০ কোটি এবং কংগ্রেস ১৪২২ কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে। নির্বাচনী বন্ড মারফত কোন দলকে, কে কত টাকা চাঁদা দিচ্ছেন, তা গোড়া থেকেই সাধারণ মানুষের থেকে লুকনো ছিল। কিন্তু নির্বচনী বন্ডের মাধ্যমে চাঁদা দিয়ে শিল্প সংস্থাগুলি সরকারের থেকে লাভবান হচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ সামনে আসে। এমনকি, SBI-এর কাছে মজুত তথ্য থেকে বিরোধী দলগুলিকে কে, কত চাঁদা দিচ্ছে জেনে, BJP কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে লেলিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিরোধী দলগুলিও। সেই মামলা সুপ্রিম কোর্টে উঠলে নির্বাচনী বন্ডও অসাংবিধানিক বলে ঘোষিত হয়। পাশাপাশি, কার কাছে কত চাঁদা গিয়েছে, তাও সামনে আসে।