কলকাতা: একটা মন্তব্য। তাতেই নিন্দার ঝড় সোশ্যাল মিডিয়ায়। গতকালই তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA) কাঞ্চন মল্লিক (Kanchan Mullick) কোন্নগরের তৃণমূল আয়োজিত ধর্নামঞ্চ থেকে বলেন, 'অনেকে দুর্গাপুজোর অনুদান নেবেন না বলেছেন, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। যাঁরা কর্মবিরতি করছেন শাসকদলের বিরুদ্ধে, তাঁরা সরকারি বেতন, বোনাস নেবেন তো? সরকারি পুরস্কার ফেরত দেবেন তো?' এরপরেই সমালোচনার ঝড়। অভিনেতা বিধায়কের বিরুদ্ধে সরব তাঁরই সহকর্মীরা। নাম করেই কটাক্ষ অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তীর (Sudipta Chakraborty)। নাটক বাতিল করলেন অভিনেতা সুজন নীল মুখোপাধ্যায় (Sujan Neel Mukherjee)। কে কী বললেন?


কাঞ্চনের 'সরকারি বেতন, বোনাস' মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়


কাঞ্চন মল্লিক এদিন দলীয় কর্মসূচি থেকে মন্তব্য করেন যাঁরা শাসকদলের বিরুদ্ধে বিচার চেয়ে কর্মবিরতিতে রয়েছেন সেই চিকিৎসকেরা সরকারি বেতন ও বোনাস নেবেন তো? আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে যখন উত্তাল গোটা বাংলা, সেই আবহে তারকা বিধায়কের এমন মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় সোশ্যাল মিডিয়ায়। কাঞ্চনের অভিনয় জগতের সহকর্মীরাই মুখ খুলেছেন তাঁর বিরুদ্ধে।


সোমবার ভোরের দিকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দু'টি পোস্ট করেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। প্রথম পোস্টে লেখেন, 'মাননীয় বিধায়ক শ্রী কাঞ্চন মল্লিক, এটা আপনি কী বললেন? কর্মবিরতিতে থাকা ডাক্তাররা সরকারি চাকরি করেন বলে তাঁদের কর্মস্থলে দিনের পর দিন ধরে ঘটে যাওয়া সরকারের অন্যায় কাজ নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলতে পারবেন না? সরকারি পদক্ষেপ নিয়ে হতাশা বা উষ্মা প্রকাশ করতে গেলে একজন সরকারি চাকুরিজীবীর মাইনে নেওয়া যাবে না? বিচারের দাবিতে মিছিলে গেছেন বলে তাঁদের পুজোর আগে প্রাপ্য বোনাস নিয়ে খিল্লি করে বলবেন 'বোনাস টোনাস যে হয়, সেটা নেবেন তো, না নেবেন না?' 'চাকরি' শব্দটা তো আপনি আক্ষরিক অর্থে নিয়ে নিয়েছেন মশাই! সরকারি হাসপাতালের সরকারি কর্মচারী নৃশংসভাবে ধর্ষিত ও খুন হয়ে যাওয়া তিলোত্তমার মা বাবাকে 'মেয়ে আত্মহত্যা করেছে' বলল কেন - এই প্রশ্ন করার আগে সরকারের দেওয়া পুরস্কার ফেরত দিয়ে দিতে হবে? না, মানে, বিবেকের তাড়নায় কেউ ফেরত দিতেই পারেন। কিন্তু সেটাই পূর্ব শর্ত নাকি? দেওয়ালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি ঝুলিয়ে রেখে এই নির্লজ্জ কমেডি করার আগে একবারও ভাবলেন না? আপনার কমেডি অভিনয়ই কিন্তু মানুষের মনে একদিন আপনার পাকাপাকি স্থান দিয়েছিল। আমিও তার ফ্যান। কিন্তু আজ যেটা করলেন, ওটা কমেডিও হয়নি, অভিনয়ও হয়নি। ওটা কিছুই হয়নি। আপনার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক শিগগিরই, এই কামনা করি। এই সরকারি পুরস্কার অনুষ্ঠানগুলোয় আমার বহু বছর যাওয়া হয়ে ওঠে না। আচ্ছা, ওখানে পুরস্কার দেবার আগে কি এইগুলো বলে দেওয়া হয়? মানে পুরস্কার পাওয়ার পরের Do's and Don'ts গুলো কী ও কয় প্রকার? না, মানে জানতে চাইছি আর কী।' (অপরিবর্তিত)




পরের একটি পোস্টে তিনি লেখেন, 'এক সময়ের বন্ধু/সহকর্মী কাঞ্চন মল্লিক, তোকে ত্যাগ দিলাম। অনুপ্রেরণার লকারে চোখ, কান, মাথা, মনুষ্যত্ব, বিবেক, বুদ্ধি, বিবেচনা, শিক্ষা সব ঢুকিয়ে রেখে চাবিটা হারিয়ে ফেলেছিস মনে হয়। চাবিটা খুঁজে পেলে খবর দিস বন্ধু। তখন আবার কথা হবে, আড্ডা হবে।' এরপর স্টেটাসের শেষে উল্লেখ করেন, 'কথাগুলো ফোন করে বা মেসেজ করেও বলতে পারতাম হয়তো, যদি তোর বলা কথাগুলো ফোনেই শুনতাম। তুই যেহেতু নিউজ মিডিয়াকে বললি, আমিও তাই সোশ্যাল মিডিয়াতেই লিখলাম'।




এদিন সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে নাম না করে কটাক্ষ করেন অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তীও। তিনি লেখেন, 'ঘাঁটা মল্লিক / চাটা মল্লিক / ফাটা মল্লিক / টা টা মল্লিক'। 




সোমবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে কাঞ্চনের সঙ্গে এক নাটকের শো বাতিল করলেন নাট্যশিল্পী সুজন নীল মুখোপাধ্যায়। 'মাগন রাজার পালা' নামক এক বহু প্রশংসিত নাটকের মূল দুই চরিত্রে মঞ্চে অভিনয় করতেন কাঞ্চন ও নীল। মাগনের চরিত্রে কাঞ্চন মল্লিক। তবে এদিন নীল পোস্ট করে ঘোষণা করেন 'মাগন‌ আর রাজা আর জুটি বেঁধে মঞ্চে নামবে না। বেশ কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব বা মানুষের নিদান আসল।‌ সেটা গ্ৰহণ করতে হয়। উল্টো দিকে এটাও সত্যি, কাঞ্চন মল্লিকের এই নাটকে যে অবদান, তা চিরকাল মনে গেঁথে থাকবে। অভিনেতা হিসেবে ওঁর লড়াই, ওঁর নিষ্ঠা, ওঁর দক্ষতাকে আজীবন শ্রদ্ধা করব। বাকিগুলো ভুলে যাওয়ারই নামান্তর। আমরা একসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা‌ ভারতবর্ষ জুড়ে ৫৫টি মতো অভিনয় করেছি। সে অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। শিখেছি অনেক কিছু। কাঞ্চন ছাড়া মাগন‌ হয় না, ওঁর অতুলনীয় অভিনয় এই নাটকের প্রাণ ছিল। আমার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি। এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের মুহূর্তে এই নাটক স্তব্ধ হল।'










এদিন জনপ্রিয় অভিনেতা শঙ্কর দেবনাথও সরাসরি আক্রমণ শানিয়ে লেখেন, 'মল্লিক পরিবারের কলঙ্ক। কী আর করা যাবে বল, কালীঘাটে জন্ম তো...'। 




আরও পড়ুন: Sidharth Shukla: পড়েছিলেন 'ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং', মডেলিং থেকে অভিনয়, ফিরে দেখা সিদ্ধার্থ শুক্লর কর্মজীবন


নাম করে হোক বা না করে, যাঁরা যাঁরাই তারকা বিধায়কের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন, প্রত্যেকের পোস্টেই তা স্পষ্ট। আরজি কর কাণ্ডের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে। ফের রাত দখলে নাগরিক সমাজ। রবিবার রাতে ধর্মতলায় ধর্নায় সামিল হলেন স্বস্তিকা, সোহিনী, দেবলীনারা। গানে-স্লোগানে প্রতিবাদ চলল সোমবার ভোর পর্যন্ত। সেই আবহে কাঞ্চনের এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষও।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।