প্রকাশ সিনহা, কলকাতা : হাউস স্টাফ ও TMCP নেতা আশিস পাণ্ডেকে সামনে রেখেই, আর জি কর মেডিক্যালে দুর্নীতি চালিয়ে গেছেন সন্দীপ ঘোষ। টাকার বিনিময়ে হাউস স্টাফের চাকরি দেওয়া থেকে শুরু করে, অযোগ্যদের নম্বর বাড়ানো, হুমকি। চার্জশিটে এরকম বহু ঘটনার কথা তুলে ধরেছে CBI।


শুধুমাত্র বিপ্লব সিংহ কিংবা সুমন হাজরাকে কোটি কোটি টাকার সরকারি কাজের বরাত পাইয়ে দিয়ে দুর্নীতি করাই নয়, সিবিআই-এর দাবি, আর আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে হাউস স্টাফের কাজ পাইয়ে দিতে, হাউস স্টাফ ও TMCP নেতা আশিস পাণ্ডেকে সামনে রেখে, মেডিক্যাল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ চূড়ান্ত দুর্নীতি করেছেন। শিক্ষা দুর্নীতির সঙ্গে তুলনীয় সেই প্রতারণার যাবতীয় তথ্য আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে তুলে ধরেছে CBI।

টাকার বিনিময়ে মেধাবী যোগ্যদের নম্বর কমিয়ে, কম নম্বরপ্রাপ্তদের নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া, হাউস স্টাফদের থেকে ৭-৮ হাজার টাকা করে মাসোহারা নেওয়া, বিরোধিতা করলেই হুমকি দেওয়া...অভিযোগের শেষ নেই। CBI-এর চার্জশিট দেখে বলা যেতেই পারে, আশিস পাণ্ডেকে ব্যবহার করে কার্যত রিং মাস্টারের ভূমিকায় থেকেছেন সন্দীপ ঘোষ। চার্জশিটের ২৯ নম্বর পাতায় CBI-এর তরফে দাবি করা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আর জি কর মেডিক্যালে ইন্টারভিউয়ের পর মেধার ভিত্তিতে তৈরি হওয়া মেরিট লিস্ট বদলে দিয়েছিলেন সন্দীপ ঘোষ। ইন্টারভিউয়ে প্রাপ্ত নম্বর কমিয়ে-বাড়িয়ে যোগ্যদের বঞ্চিত করে অন্যায় সুবিধা নেওয়ার জন্য অযোগ্যদের জায়গা করে দেন এবং পেন দিয়ে ইচ্ছে মতো বিভাগ বণ্টন করেন। চার্জশিটে CBI-এর দাবি, কারচুপি করা মেরিট লিস্টের ছবি তুলে রেখেছিলেন হাসপাতালের আপার ডিভিশন ক্লার্ক ও একজন সহকর্মী। সেই অকাট্য প্রমাণ গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে।

পাশাপাশি এক্স স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে, ভোট পাইয়ে দিতেও টাকা নেওয়া হত। এমনকী প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঘুষের টাকা নেওয়ার পদ্ধতিতেও এসেছে পরিবর্তন। UPI-এর মাধ্যমে আশিস পাণ্ডেকে কে কত টাকা দিয়েছিলেন, তাও চার্জশিটে তুলেছে ধরেছে CBI।

CBI-এর দাবি, এত অপরাধ সত্ত্বেও সন্দীপ ঘোষ ও আশিস পাণ্ডের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে পারছে না তারা। কারণ তাঁরা দু'জনেই সরকারি কর্মী। গত ১০ তারিখ সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে, আর্থিক দুর্নীতির ক্ষেত্রেও চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। দুই সরকারি কর্মী ও আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার জন্য রাজ্য সরকারের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত তা মেলেনি।

পাল্টা রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল দাবি করেন, তাঁরা এখনও CBI-এর তরফে এরকম কোনও আবেদন পাননি।