কলকাতা: এই মাসেই মা-বাবাকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলেন। কিন্তু নভেম্বর এলেও, ঘুরতে যাওয়া আর হল না। কারণ যে মেয়েটা যাবতীয় প্ল্যান করেছিল, সেই তো ছুটিতে চলে গেছে তিন মাস আগে। এখন শুধু বিচারের আশায় চোখের জল ফেলছেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা।


ভেবেছিলেন এক। হয়েছে আরেক। নভেম্বর আসতে আসতে জীবনটা যে এভাবে তছনছ হয়ে যাবে, স্বপ্নেও ভাবেননি ওঁরা। এই মাসেই ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল বাবা-মায়ের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া, প্রচুর আনন্দ করার। কিন্তু যে এতকিছুর প্ল্যান করেছিল, সে-ই তো চলে গেছে না ফেরার দেশে। ঘরে রয়ে গেছেন শুধু মা-বাবা, আর তাঁদের চোখের জল। নিহত চিকিৎসকের মা বলেন, "নভেম্বর মাসে আমরা অনেক ঘুরব, অক্টোবর তো পুজোতেই কেটে যাবে, বাড়িতে পুজো। নভেম্বর মাসে আমরা অনেক ঘুরব, সব জায়গায় যাব, খাওয়াদাওয়া করব, এইসব প্ল্যান করা ছিল তো। ওগুলো আমি নিতে পারছি না আর ভিতর থেকে।''


৯ অগাস্ট, তাঁদের ডাক্তার মেয়েকে কর্মস্থলেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। রবিবার সেই আর জি কর-কাণ্ডের ১০০তম দিন। একমাত্র সন্তান হারানোর যন্ত্রণা যে কী, তা এই ১০০ দিনের প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা সেকেন্ডে টের পেয়েছেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা। নিহত চিকিৎসকের মা বলেন, "প্রতিটা মুহূর্ত আর কী ১০০ দিন, ৯৯ দিন, এসব না। প্রতিটা সেকেন্ড আমি গুনে গুনে চলছি। আশা রাখছি বিচারের। এখন এত যন্ত্রণা, এত কষ্টে রয়েছি, যে সেটা বলে বোঝানো যাবে না। নিহত চিকিৎসকের বাবার কথায়, আশা করছি বিচার। এত লোকের চাওয়া কোনওদিন ব্যর্থ যাবে না এবং যেটুকু বুঝতে পারছি, CBI-ও চেষ্টা করছে, আশা করছি একটা ভাল কিছু পাব এবং বিচারব্যবস্থার উপরে তো আস্থা রাখতেই হবে, রাখছি। ১০০ দিনটা ঠিক আমাদের কাছে বড় বিষয় না, ভাল করে তদন্ত হোক এবং যেন বিচারটা পাই। এটাই আমাদের কাছে আশা।''

আর জি কর মেডিক্যালে চিকিৎসককে খুন-ধর্ষণের ঘটনায় তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র মূল অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধেই চার্জশিট জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টে চলছে শুনানি। মেয়ে হারানো মা-বাবা অবশ‍্য একটাই জিনিসের অপেক্ষায়। বিচার। দোষীর বা দোষীদের কঠোর শাস্তি। নিহত চিকিৎসকের মা বলেন, "সে তো একটা সরকারি হাসপাতালে ছিল, সুরক্ষিত জায়গায় ছিল। আমি তো স্বপ্নেও ভাবিনি, এই দায় তো কোনওভাবেই রাজ্য সরকার এড়াতে পারে না। কারণ এটা প্রাতিষ্ঠানিক খুন। তাকে পরিকল্পনামাফিক মারা হয়েছে। কিছুদিন আগে, রাস্তায় একটা দুর্ঘটনা হয়েছিল তার, তখন সে কত মা মা করে কেঁদেছিল। আর এই চরম যন্ত্রণার সময়, সে যে কত মা মা করে চিৎকার করেছে, আমি তার কাছেও যেতে পারিনি, কিছু করতেও পারিনি। আমি তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি। এই সমাজব্যবস্থার জন্যই আজকে আমার মেয়েটা বলি হয়েছে। এটা রাজ্য সরকার, পুলিশ প্রশাসন কিছুতেই তাদের দায় এড়াতে পারে না এবং আমি বিচার চাই সেই প্রশাসনিক ব্যবস্থার উপরে।''


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।    


আরও পড়ুন: Saokat Molla: পরীক্ষা না দিয়েই সরকারি চাকরির পক্ষে সওয়াল, তৃণমূল বিধায়কের মন্তব্যে বিতর্ক