সন্দীপ সরকার, কলকাতা: ক্রিটিক্যাল কেয়ার ও জেনারেল বেড বিক্রি হচ্ছে বলে জুনিয়র ডাক্তাররা যে অভিযোগ করেছিলেন, তার সপক্ষে কোনও প্রমাণ মেলেনি। এমনই দাবি করা হল তদন্ত কমিটির রিপোর্টে। তবে দালালরাজ রুখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
কলকাতা মেডিক্যালে বিক্রি হচ্ছে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ও জেনারেল বেড! এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু এই অভিযোগের সপক্ষে কোনও তথ্য প্রমাণ পেল না হাসপাতাল গঠিত তদন্ত কমিটি। বুধবার কলকাতা মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষকে এই মর্মে দেওয়া হল রিপোর্ট।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে জোড়া অভিযোগ জানানো হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। অভিযোগ ছিল, কলকাতা মেডিক্যালের ক্রিটিকাল কেয়ার বেড এবং জেনারেল বেড বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। চড়া দামে বেড বিক্রি করে দিচ্ছে দালালরা।
এর পাশাপাশি অভিযোগ ওঠে, কলকাতা মেডিক্যালের সেন্ট্রাল ল্যাবের টেস্ট কিট পাচার হয়ে যাচ্ছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। অভিযোগ করা হয় রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ও তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায়, এবং তৃণমূলের কর্মী ইউনিয়নের নেতা জয়ন্ত ঘোষের বিরুদ্ধে।
জোড়া অভিযোগের ভিত্তিতে ২ টি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। বেড বিক্রির অভিযোগে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, বুধবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছে সেই কমিটি।
অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্য ও জুনিয়র চিকিৎসক শেখ মেহবুব হোসেন এবং তদন্ত কমিটির সদস্য ও জুনিয়র চিকিৎসক সৌম্যস্বরাজ কুইলা বলছেন, 'অভিযোগের প্রমাণ নেই বলে, এই রিপোর্ট দিতে হল। এই ধরনের ঘটনা ঘটে না, তা তো নয়। ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে, তার জন্য সুপারিশ করলাম।'
অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করলেও দালালরাজ রুখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে এই কমিটি। তাতে বলা হয়েছে, এবার থেকে চিকিৎসাধীন রোগী বা তাঁদের পরিবারকে দেওয়া হবে ফিডব্যাক ফর্ম। তাতে থাকবে কয়েকটি প্রশ্ন। হাসপাতালে ভর্তির জন্য কাউকে টাকা দিতে হয়েছে কি না, হাসপাতালে পরিষেবা পেতে কোনও টাকা খরচ করতে হয়েছে কি না, হাসপাতালে ওষুধ কিনতে হয়েছে কি না, ল্যাবে পরীক্ষার জন্য কেউ টাকা চেয়েছেন কি না, এমনই একাধিক প্রশ্ন সেই ফর্মে রাখার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
ফর্মে প্রশ্নের পাশে হ্যাঁ বা না তে টিক চিহ্ন দিতে হবে। এর পাশাপাশি, হাসপাতালের পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে সতর্কতামূলক অডিও বার্তা চালানোরও সুপারিশ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির আরও সুপারিশ, হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক করতে হবে। পরিচয়পত্র সব সময় গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা যাতে এক বিভাগে দীর্ঘদিন কর্মরত না থাকে সেই বিয়য়টি নিশ্চিত করতে হবে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ অঞ্জন অধিকারী বলছেন, 'সেরকম কিছু পাওয়া যায়নি। তবুও আমরা কিছু পদক্ষেপ করেছি।'
সোমবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট জমা দেবে জোড়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৈরি করা দ্বিতীয় তদন্ত কমিটি। অর্থাৎ, তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায়, এবং তৃণমূলের কর্মী ইউনিয়নের নেতা জয়ন্ত ঘোষের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সত্যতা তদন্ত কমিটি পেয়েছে কিনা, জানা যাবে সেদিনই। এদিকে কলকাতা মেডিক্যালে এদিন থেকে চালু হল ডিজিটাল বেড ভ্যাকেন্সি মনিটরিং সিস্টেম। জরুরি বিভাগের সামনে বসানো হয়েছে এলসিডি স্ক্রিন।
আরও পড়ুন: দেশের মাটিতে রোহিত-কোহলিদের বিপর্যয়ের নেপথ্যে হুগলির এক বাঙালি!
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।