কলকাতা: কাজ হল না নবান্নের বৈঠকেও, কর্মবিরতিতে অনড় ডাক্তাররা। সন্ধে পেরিয়ে মধ্যরাত, নবান্নে প্রায় ৬ ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠক। নবান্নে ম্যারাথন বৈঠকেও কাটল না জট, 'মিনিটস' নিয়ে টানাপড়েন। 'মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যসচিব, কিন্তু মিনিটস চূড়ান্ত হয়নি, আমরাও কাজে ফিরতে চাই, কিন্তু কিছু বিষয়ে সমাধানসূত্র বেরোয়নি। বৈঠকের মিনিটস দেননি মুখ্যসচিব, শুধু মিলেছে মৌখিক আশ্বাস', দাবি ডাক্তারদের প্রতিনিধি দলের। এদিনের আলোচনায় হতাশ বলেও জানিয়েছেন ডাক্তাররা। মৌখিকভাবে আশ্বাস মিললেও মিনিটসে সেগুলি ঢোকাতে সমস্যা কোথায়? প্রশ্ন আন্দোলনকারীদের। 


আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন, 'থ্রেট কালচার থেকে বেডের সমস্যা-সব দাবি সঠিক বলেছে সরকার। কিন্তু নিরাপত্তা, ছাত্র ভোট থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবা-শুধুই মৌখিক আশ্বাস। ভেবেছিলাম প্রশাসন সদিচ্ছা নিয়ে আমাদের দাবি শুনছেন। কিন্তু কার্যবিবরণীতে দেখলাম, সেই সব কথা আর নেই। মুখে বলা হলেও, দেওয়া হয়নি লিখিত প্রতিশ্রুতি। আলোচনার শেষে আমরা হতাশ, কেন লিখিতভাবে আপত্তি? আমাদের দাবি কার্যকর করতে সরকারের অনীহায় হতাশ।' মুখ্যসচিব জানিয়েছেন দাবিগুলি নিয়ে সুস্পষ্ট ডিরেক্টটিভ আগামীকালের মধ্যে জানাতে, তারপর প্রয়োজনীয় অর্ডার বের করতে তিনি সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন, দাবি আন্দোলনকারীদের। 


যদিও প্রথমে শোনা যাচ্ছিল, নবান্নে সরকারের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের 'ইতিবাচক' বৈঠক। ৮ দফার মধ্যে ৭ দফাই মেনে নিল সরকার, খবর সূত্রের। স্বাস্থ্য সচিবের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ছাড়া সব দাবি মানল সরকারের, খবর সূত্রের। 'থ্রেট কালচারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবিতে আশ্বাস, হাসপাতালে সুরক্ষা থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে খালি বেড বরাদ্দের ব্যবস্থা', জুনিয়র ডাক্তারদের ৮ দফা দাবির মধ্যে ৭ দফাতেই সরকারের সম্মতি, খবর সূত্রের। এদিন সন্ধে সাড়ে ছটায় বৈঠক শুরু হয়। ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট ধরে বৈঠক হয়। সূত্রের খবর ছিল, ২ পক্ষই সন্তুষ্ট। প্রতি কলেজে জুনিয়র ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে টাস্ক ফোর্স। হাসপাতালের সুরক্ষায় মহিলা পুলিশকর্মীদের মোতায়েন। ১৫ দিনের মধ্যে সব মেডিক্যালে কার্যকর হবে সেপারেট রেস্ট রুম, সিসিটিভি ক্যামেরা। ৭ দিন অন্তর রিপোর্ট দিতে হবে। সেন্ট্রাল মনিটর বেড অকুপ্যান্সি, খালি পদ পূরণ করতে হবে, ডাক্তার নিয়োগে স্বচ্ছতা, কলেজ থ্রেট কালচারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করতে হবে, ছিল এমন দাবিগুলিই। সূত্রের খবর, দাবিগুলির সঙ্গে মৌখিকভাবে সহমত হয়েছে সরকার। যদিও লিখিত কিছু এদিন মেলেনি। 


পরে বৈঠক থেকে বেরিয়ে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাত বলেন, 'যা যা দাবি ছিল- থ্রেট কালচার নির্মূল করা, ছাত্র সংসদের দাবি থেকে শুরু করে রোগী পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা অনেক হয়েছে। কিন্তু মিনিটস যখন চাইলাম তখন মুখ্য সচিব বললেন তিনি দিতে পারবেন না। সামান্য কিছু বিষয় নিয়ে দিতে চেয়েছিলেন আমরা রাজি হইনি। তারপর উনি বললেন একটা মেইল করতে, কাল হয়তো পাঠাবেন। আমরা দেখব তাতে কী থাকে। আমরা দ্রুত কাজে ফিরতে চাই। আমাদের যে দাবি ছিল, ন্যূনতম দাবি-দাওয়া সেগুলো পূরণ করবেন। অবস্থান ও কর্মবিরতি চলবে। আমরা ডিরেক্টিভের অপেক্ষায় আছি।'


কী কী দাবি ছিল?
মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে সবস্তরের কর্মরত নারীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করার দাবি। প্রত্যেক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে যথেষ্ঠ সংখ্যক নারী পুলিশ মোতায়েনের দাবি জানানো হয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছে কলেজ ভিত্তিতে টাস্কফোর্স করার কথা বলা হয়েছে। সব টাস্কফোর্সে জুনিয়র ডাক্তারদের রাখার দাবি করা হয়েছে। যথাযথ রোগী পরিষেবা সুনিশ্চিত করার দাবি করা হয়েছে, তাঁদের দাবি পরিষেবা সুনিশ্চিত না করা হলে সুরক্ষা নিয়ে সমস্যা হবে। সব হাসপাতালে ডাক্তার ছাড়াও স্থায়ী ভিত্তিতে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের দাবি করা হয়েছে। হাসপাতালগুলিতে শয্যা নিয়ে দালালচক্র বন্ধ করার দাবি করা হয়েছে। রক্তপরীক্ষা-সহ বাকি পরীক্ষা যেন হাসপাতালে গড়ে ওঠে, সেই দাবি জানানো হয়েছে। জনমুখী ও উন্নত সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দাবি করা হয়েছে। এছাড়া, হাউসস্টাফশিপ নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করার দাবি করা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে রোগী পরিষেবা সুনিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালে বেড নিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। হাসপাতালে নার্স, স্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করতে হবে, এই দাবিগুলিও চলছে।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে। 


আরও পড়ুন: বিশ্বকর্মা প্রতিমা বিসর্জনে বিপত্তি! হুড়মুড়িয়ে সোজা গঙ্গায় নেমে গেল লরি