কলকাতা: ব্যবস্থা নিলে কেরিয়ারটা নষ্ট হয়ে যাবে। আর জি কর-কাণ্ডে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার আহ্বান জানালেও প্রছন্ন হুঁশিয়ারি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা জানিয়ে দিলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।  


ঠিক কী বলেছেন মমতা?


মুখ্যমন্ত্রী বুধবার বলেছেন, 'আমি ব্যবস্থা নিতে চাই না। তার কারণ, আমি চাই, ওরা ভাল করে পড়াশোনা করুক। আমি যদি কারও বিরুদ্ধে FIR করি, তার ভবিষ্য়ৎটা নষ্ট হয়ে যাবে। সে আর কোথাও চান্স পাবে না। পাসপোর্ট পাবে না, ভিসা পাবে না। আমরা সেটা চাই না।' 


এ প্রসঙ্গে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী এই যে বলছেন এটার মধ্যে প্রচ্ছন্ন একটা হুমকি আছে যে এখনও অ্যাকশন নিইনি। আমি চাইলে অ্যাকশন নিতে পারি। আমরাও স্পষ্ট বলতে চাই যে, এই যে কাজে ফিরতে পারছি না এই দায়টা কিন্তু আমাদের নয়। এই দায়টা কিন্তু সরকারের।' 


৯ অগাস্ট আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণ ১৪ অগাস্ট আর জি কর মেডিক্যালে তাণ্ডব, এই প্রেক্ষাপটে দোষীদের চরমতম শাস্তি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড-সহ একাধিক দাবিতে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা। চলছে লাগাতার আন্দোলন। 



আন্দোলনের ২০-তম দিনে বুধবার শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। একলাইন যে ফের পথে নেমেছে জুনিয়র ডাক্তাররা আর এদিনই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি কি প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারিই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী?  


মমতার কথায়, 'আমরা কোনও ব্যবস্থা নিইনি। আপনারা আন্দোলন করেছেন, আমি কোনও ব্যবস্থা আপনাদের বিরুদ্ধে নেব না। কারণ আমি যেহেতু মনে করি, আপনাদের দুঃখ থাকতে পারে। অভিমান থাকতে পারে। ক্ষোভ থাকতে পারে। আপনারা বিচার চাইছেন। কিন্তু, এবার আস্তে আস্তে জয়েন করুন। এবার আস্তে আস্তে যোগদান করুন। তা নাহলে সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু সেদিন বলেছিলেন, এরপর থেকে রাজ্য সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হল, ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমি ব্যবস্থা নিতে চাই না। তার কারণ, আমি চাই ওরা ভাল করে পড়াশোনা করুক। আমি যদি কারও বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিই, সে বিচার পাবে না। সে মনে রাখবেন, তার জীবনটা পুরো নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা সেটা চাই না। আমাদের সরকারের মানবিক মুখ আছে। মানবিক মুখ দিয়ে আমি আরও ডাক্তার তৈরি করতে চাই।' 


আরও পড়ুন, 'কী করেছিল মেয়েটা, আমরা কি প্রতিবাদ করতে পারব না?' বলতেই পাকড়ে নিয়ে গেলেন ডিসি ইন্দিরা


মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর এক আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার বলেন, 'পরিষ্কার বলে দিতে চাই কোনও দমনপীড়নের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে আটকানো সম্ভব নয়। আন্দোলন আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যা চান তিনি তা করতে পারেন। যদি একটা শান্তিপূর্ণ সুশৃঙ্খল আন্দোলন দমাতে যান তাহলে তার দায় ওনাকেই নিতে হবে'। 


বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, 'ঘুরপথে ডাক্তারদেরকে হুমকি দিচ্ছে। এখন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মানসিক স্থিতি হারিয়ে ফেলেছেন। বাংলার সাধারণ মানুষকে হুমকি দিচ্ছেন। ডাক্তারদেরকে হুমকি দিচ্ছেন। সরকারি কর্মচারীদেরকে হুমকি দিচ্ছেন অফিসে যেতে হবে, না হলে এরকম চলবে না।' 


আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশে থাকতে উত্তরপ্রদেশের মথুরা থেকে সাইকেল চালিয়ে কলকাতায় এসেছেন নার্সিং পড়ুয়া এক যুবক।



আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে