সত্য়জিৎ বৈদ্য়, সুদীপ্ত আচার্য ও পুরুষোত্তমনারায়ণ পণ্ডিত, কলকাতা : আর জি কর-কাণ্ডের সুবিচার-সহ একাধিক দাবিদাওয়া নিয়ে, স্বাস্থ্য় ভবনের বাইরে সারারাতব্য়াপী অবস্থানে জুনিয়র ডাক্তাররা। আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানাতে মধ্য়রাতে সেখানে পৌঁছোলেন নিহত চিকিৎসকের মা-বাবা। প্রশাসনের উদ্দেশে একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়ার পাশাপাশি মুখ্য়মন্ত্রীর মন্তব্য় নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা।


একমাস আগে, এরকম একটা বিভীষিকাময় রাতই, কেড়ে নিয়েছিল তাঁদের ডাক্তার মেয়েকে। সেই মেয়ের জন্য় বিচার চেয়ে অসংখ্য় জুনিয়র ডাক্তার যখন রাস্তায় রাত জাগছেন, তখন তা দেখে ঘরে বসে থাকতে পারলেন না আর জি কর মেডিক্য়ালের নিহত চিকিৎসকের মা-বাবা।পরিবারের সদস্য়দের নিয়ে মঙ্গলবারও তাঁরা পৌঁছলেন জুনিয়র ডাক্তারদের সারা রাতব্য়াপী অবস্থানে। মেয়ের বিচারের দাবিতে সরব হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনের দিকে ছুড়ে দিলেন একের পর এক প্রশ্ন। সোমবার নিহত চিকিৎসকের পরিবারকে টাকা দিতে চাওয়ার অভিযোগ নস্য়াৎ করেছিলেন মুখ্য়মন্ত্রী। যা নিয়ে মঙ্গলবার রাতে পাল্টা সরব হল নিহত চিকিৎসকের পরিবার।


মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, 'আমাকে প্রমাণ দেখাক, কোথাও আমি টাকার কথা বলেছি, মেনশন করেছি। মিথ্য়া কথা, কুৎসা, অপপ্রচার, চক্রান্ত। সেদিনের ভিডিওগ্রাফ প্রত্য়েকে আমি নীচে নামার পরে... সাংবাদিক বৈঠকে... আমার সঙ্গে CP (পুলিশ কমিশনার) ছিল। আমার পরেও তাঁর (নিহত তরুণী) বাবা-মাকে আপনারা জিজ্ঞেস করেছিলেন সে রেকর্ডও আমাদের কাছে আছে।'

এ প্রসঙ্গে নিহত চিকিৎসকের কাকিমা সরব হলেন। তিনি বললেন, 'ওই অবস্থায় কোনও বাবা-মার পক্ষে কি চাওয়া সম্ভব? যেহেতু চাকরিরত অবস্থায় আমাদের মেয়ে চলে গেছে, একটা কমপেনসেশন আপনারা পাবেন। মা যিনি বলেছিলেন, হ্যাঁ দিদি আমরা তখনই সেটা নেব, যখন আমাদের মেয়ে সঠিক বিচার পাবে। উনি বলেছেন, পরিবার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। আমি এখানে পুরো পরিবারকে নিয়ে বলে যাচ্ছি, উনি  যে দাবি করেছেন সেটা সম্পূর্ণ মিথ্য়া। উনি আরও বলেছেন, কোনও প্রমাণ আছে? তাহলে কি আমাদের উচিত ছিল, যখন আমাদের মেয়ের দেহ ঘরে পড়েছিল, তখন ভিডিওগ্রাফি করে রাখার দরকার ছিল। উনি কি প্রমাণ দিতে পারবেন, যে উনি দিতে চাননি?'

মুখ্য়মন্ত্রীর উৎসবে ফেরার বার্তা নিয়েও কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে নিহত চিকিৎসকের পরিবার। মমতা বলেছিলেন, '১ মাস তো হয়ে গেল। আজকে ৯ তারিখ। আমি অনুরোধ করব, পুজোতে ফিরে আসুন। উৎসবে ফিরে আসুন।' এনিয়ে পাল্টা জবাব দিলেন নিহত চিকিৎসকের মা। তিনি বললেন, 'মুখ্য়মন্ত্রী বলেছেন, উৎসবে ফিরতে। আমার মনে হয়, আমার পরিবারকে নিয়ে সবথেকে বড় উৎসবে আছি এখন। এর থেকে বড় উৎসব আর কী হতে পারে ? মা দুর্গার অবশ্যই এখানে আসা দরকার। তাঁর দশ হাত আমাদের অবশ্য়ই দরকার। এই উৎসব মিটিয়ে তারপর দুর্গাপুজোর উৎসবে ফিরব।'

আর জি কর-কাণ্ডের বিচারের পাশাপাশি স্বাস্থ্য়সচিব, স্বাস্থ্য় পরিষেবা অধিকর্তা, স্বাস্থ্য় শিক্ষা অধিকর্তা, পুলিশ কমিশনারের পদত্য়াগ চেয়ে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য়ভবন অভিযান করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। প্রশাসনের তরফে আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে, রাতভর সেখানেই অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। এনিয়ে নিহত চিকিৎসকের বাবা বলেন, 'তোমরা যদি এভাবে সহযোগিতা করো, আমিও আশা করছি বিচার পাবই।'

নিহত চিকিৎসকের দাদার বক্তব্য, 'রাতের বেলা ১২টার সময় খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে থাকার কথা নয়। প্রশাসনকে বুঝতে হবে, হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় কেন? কী লুকনো হয়েছে? প্রশাসনকে জবাব দিতে হবে।'

একমাস পার। আন্দোলন চলছে। বিচার মিলবে কতদিনে? সেটাই আসল প্রশ্ন।