অরিন্দম সেন, আলিপুরদুয়ার : বড়দিনের রাতে, একাকী শিশুকে উদ্ধার করেও সমস্যায় রেলের আরপিএফ-এর টিম। পরিচয়হীন শিশুটি, মূক ও বধির হওয়ায় আলিপুরদুয়ার চাইল্ড লাইন-এর হাতে তুলে দিতে বাধ্য হল আরপিএফ (RPF)। 


জানা গিয়েছে, বড়ো দিনের রাতে মুজনাই স্টেশন প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চে একাকী শুয়েছিল ছোট্ট শিশুটি। অনুমান করা হয়েছিল ওই শিশুটির বয়স  ৬ অথবা ৭ । রাত ২ টা নাগাদ রেলের 'অপারেশন নানহে ফরিস্তে' টিমের এক মহিলা আরপিএফ-সহ তিনজনের টিম মাদারিহাটের সেই মুজনাই স্টেশনেই তখন টহলদারিতে। তাঁদের চোখে পড়ে শিশুটি। অসহায়, অবহেলায় একাকী ঠান্ডায় শুয়ে থাকা শিশুটিকে দেখে তাঁদের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়। শিশুটির অভিভাবকের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু বুঝতে পারে কথা বলতে অক্ষম শিশুটি। মূক ও বধির।


প্ল্যাটফর্মে খোঁজ চলে।  এমনকি খাতা-পেন তুলে দিয়েও চেষ্টা হয়েছে প্রবল, কিন্তু সাড়া দেয়নি শিশুটি। মোবাইল হাতে দিয়েও দেখা হয়েছে জানে নাকি পরিবারের ফোন নম্বর। কিন্তু সেখানেও অসফল হন আরপিএফ টিম।  এরপর অপেক্ষা এবং খোজ শুরু হয় শিশুর পরিচয়ের। কিন্তু রাত পেরিয়ে সকাল, খোঁজেও আসেনি কেউ। এমনকি স্টেশন এলাকা-সহ আশেপাশেও পাওয়া যায়নি শিশুর পরিচিত কেউ। আরপিএফ, জিআরপি, কেউ বাদ রাখেনি তল্লাশীতে। অবশেষে, বাধ্য হয়েই মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ার চাইল্ড-লাইনের হাতে তুলে দেওয়া হয় শিশুটিকে। 


উল্লেখ্য, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের অন্তর্গত এই মুজনাই স্টেশন। আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে ডুয়ার্সের জঙ্গল পথে শিলিগুড়ি যেতে পড়ে এই ছোট্ট স্টেশন। চা বাগান বেষ্ঠিত মাদারিহাট-দলগাও স্টেশনের মাঝেই এই মুজনাই। যেখানে একমাত্র প্যাসেঞ্জার ট্রেন আলিপুরদুয়ার জংশন-শিলিগুড়ি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস দাঁড়ায়। রেলসূত্রে জানা যায়, এই ট্রেনটি সেদিন রাত সাড়ে ৮ টা৩৭ মিনিটে স্টেশন ছেড়ে যায় আলিপুরদুয়ার জংশনের পথে। 


আলিপুরদুয়ার রেলওয়ে ডিভিশনের এসিস্টেন্ট সিকিউরিটি কমিশনার দিলিপ চৌধুরি বলেন, 'অপারেশন নানহে ফরিস্তে"র টিম একটি পরিচয়হীন শিশুর সন্ধান পায়। অভিভাবকের খোঁজ না পেয়ে রেলের কন্ট্রোলের মাধ্যমেও সমস্ত স্টেশনে তথ্য সম্প্রচার করে ঘোষনার ব্যাবস্থাও করা হয়েছিল। পরিবারের খোঁজ চালাচ্ছে আরপিএফ। যদিও তাকে সুস্থ, স্বাভাবিক রাখতে আলিপুরদুয়ার জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমেটির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। 


আরও পড়ুন, TMC-র 'গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব', বন্ধই হয়ে গেল ক্রিসমাস কার্নিভাল


আলিপুরদুয়ার জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমেটির চেয়ারম্যান অসীম বোস বলেন, পরিচয়হীন মূক ও বধির এক শিশুকে দিয়ে গিয়েছে আরপিএফের পক্ষ থেকে। আমরাও ছবি-সহ সমস্ত থানায় তথ্য পাঠিয়ে তাঁর পরিচয় জানার চেষ্টা করছি। শিশুর সঙ্গে খেলাধুলো করে তাঁকে স্বাভাবিক, স্বাচ্ছন্দ করার চেষ্টাও করা হয়েছে। মোবাইল, খাতা-পেন দিয়েও  সব রকমের চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে । শিশুকে আপাতত কামাক্ষাগুড়ির একটি হোমে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। যদিও শিশুর পরিচয় পেতে সব ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান, আলিপুরদুয়ার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমেটির চেয়ার পার্সন অসীম বোস।