ঝিলম করঞ্জাই, সুনীত হালদার, সনত ঝা: যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে (Ukraine) আটকে বহু বাঙালি। তাঁদের বেশিরভাগই ডাক্তারি পড়ুয়া। বেহালা থেকে বনগাঁ, বালি থেকে শিলিগুড়ি, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণ তরুণীরা ছড়িয়ে রয়েছেন কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী দেশটিতে। রুশ বাহিনীর হামলা শুরু হওয়ার পর কীভাবে তাঁরা দেশে ফিরবেন তা নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা।
করোনা মহামারীর ঢেউ থিতিয়ে আসতেই বেজে উঠেছে যুদ্ধের দামামা। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে আটটা থেকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেছে রাশিয়া। মুহুর্মুহু চলছে গোলাবর্ষণ, যুদ্ধবিমানের গর্জন। আর এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে সুদূর ইউক্রেনে আটকে পড়েছে এরাজ্যের বহু বাসিন্দা, যাঁদের বেশিরভাগই পড়ুয়া।বনগাঁর বাসিন্দা কৃতী সেন। তিনিও কিয়েভ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। বাড়িতে দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে চলতি মাসের ৭ তারিখ ইউক্রেন ফিরেছেন। ফিরেই যুদ্ধের মুখোমুখি। হাবড়ার কাশীপুর দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা নিশা বিশ্বাস। মধ্য ইউক্রেনের চিফ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী। ডাক্তারি পড়তে গিয়ে আটকে পড়েছেন, উৎকণ্ঠায় পরিবার। বেহালার বাসিন্দা রাহুল চন্দা ব্যবসা সূত্রে ইউক্রেনের কিয়েভ শহরের কাছেই থাকেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রবাসে তিনিও আটকে পড়েছেন। এঁদের প্রত্যেকের এখন একটাই চিন্তা। কীভাবে ফিরবেন নিজের দেশে?
হাওড়ার বালির বাসিন্দা সঞ্চয়িতা চট্টোপাধ্যায়। ইউক্রেনের টার্নোপিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। হোয়াটসঅ্যাপ কল করে জানিয়েছেন সেখানকার দুর্বিষহ পরিস্থিতির কথা। ভিডিও বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, “আমরা ফেঁসে গিয়েছি। আতঙ্কে রয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোতে বারণ কার হয়েছে। দোকানপাট বন্ধ। টাকা তুলতে পারছি না। ব্যাঙ্ক বন্ধ। বাবা-মায়ের কথা চিন্তা করছি। আবার কেরিয়ারের কথা ভেবেও চিন্তা হচ্ছে।‘’
ইউক্রেনে আটকে পড়া ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, “ভারতীয় হাইকমিশন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। খুব আতঙ্কে আছি। পড়াশোনা পরে হবে। আগে ফিরুক। ভারত সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন ঘরের ছেলেমেয়েদের ফেরাক।‘’ শিলিগুড়ির বাসিন্দা প্রীতম মালাকার। ইউক্রেনের পলটাবা মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ইউক্রেনে আটকে থাকা ছাত্রের বাবা জানাচ্ছেন, “রোজই ভিডিওকলে কথা হয়। টেনশন করেনি। আজ থেকে বোমা পড়া শুরু হতেই পুরো এলাকায় কার্ফু জারি হয়েছে। ও টেনশনে, আমরা আতঙ্কে। কীভাবে ফিরবে? ভারত সরকার দ্রুত ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক।‘’
একদিকে যখন এই ছবি, তখন বিপদ আশঙ্কা করে আগেভাগে ইউক্রেন ছেড়ে শিলিগুড়ির বাড়ি পৌঁছেছেন ইউক্রেনের আরেক পড়ুয়া বিতান বসু। যুদ্ধ পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে কেউ জানে না। প্রতীক্ষা শুধু নিরাপদে দেশে ফেরার।