উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, আশাবুল হোসেন: নির্বাচনী ময়দানে পরস্পরের প্রতিপক্ষ হলেও, তৃণমূল ও বিজেপি-র মধ্যে ‘সেটিং’ রয়েছে বলে বার বার অভিযোগ তুলেছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। এবার সেই নিয়ে বিতর্ক উস্কে দিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। তাঁরাই তৃণমূলের জন্ম দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন শমীক। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে শনীকের এই মন্তব্য ঘিরে জোর তরজা শুরু হয়েছে। আবারও তৃণমূল এবং বিজেপি-র মধ্যে আঁতাতের অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। (Samik Bhattacharya)

বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। সেই নিয়ে প্রস্তুতি চরমে সব রাজনৈতিক দলে অন্দরেই। আর সেই আবহেই  ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন শমীক। বললেন, “আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের জন্ম দিয়েছি।” তাহলে কি ভুল করছিলেন? সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে শমীক বলেন, “আমরা জন্ম দিইনি। জন্মের সময় উপস্থিত ছিলাম। কংগ্রেসের প্রবল গর্ভযন্ত্রণার সময় লেবার রুমে অটলবিহারি বাজপেয়ী এবং লালকৃষ্ণ আডবানী না থাকলে, তৃণমূল নামক শিশুটির জন্ম হতো না।” (TMC vs BJP)

শমীকের এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, “এসব কথার জাগলারি। তৃণমূল তৃণমূলের মতোই আছে। সারা বাংলা জুড়ে আছে। শুধু বিজেপি বাংলায় দুর্বল, নেই। আবার হারবে। নিজেদের হতাশা, ব্যর্থতা কথার জাগলারি দিয়ে ঘুরিয়ে লাভ নেই। বিজেপি-র যেটুকু ভোট, তা সিপিএম-এর দেওয়া। তৃণমূলের ভোট কমেনি। সিপিএম-এর ভোট বিজেপি-তে যুক্ত হয়েছে।”

সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দুই দলকেই কটাক্ষ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “বহুদিন ধরেই এটা চর্চা ছিল যে তৃণমূলের জন্মদাতা কে? অন্তত একটা জন্মদাতা পাওয়া গেল। আমরা বার বার বলতাম, বিজেপি-কে এ রাজ্যে এনেছে তৃণমূল। আর তৃণমূলের জন্মদাতা আরএসএস। এখন যখন বোঝা গিয়েছে, বিজেপি আলাদা দল হলেও, তৃণমূলের জন্মদাতা। তৃণমূল আলাদা দল হলেও, সমস্ত দিক থেকে বিজেপি-র কাছে ঋণ শিকার করতে হয় জন্ম থেকে বেড়ে ওঠার জন্য। দু’টোর বিরুদ্ধেই লড়তে হবে আমাদের।”

কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর, ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি, তৃণমূল তৈরি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় ২৭ বছর বাংলার মাটিতে রাজনীতি করছে তৃণমূল। এই ২৭ বছরে, বারবার বদলেছে তৃণমূলের প্রতিপক্ষ। বিরোধী আসনে থাকাকালীন তৃণমূলের লড়াই ছিল সিপিএম-এর বিরুদ্ধে। এর মধ্য়ে একটা বড় সময় তৃণমূলের সহযোগী ছিল বিজেপি। বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন মমতা। ১৯৯৯ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA সরকারে সামিল হন তিনি। অটবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০০৩ সালে ফের NDA-তে ফিরে গেছিলেন মমতা। বেশ কিছুদিন দফরতরহীন মন্ত্রী ছিলেন। ২০০৪ সালে তাঁকে কয়লামন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০০৪ সালের লোকসভা ভোটেও NDA-র শরিক ছিলেন মমতা। সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করে, ২০১১ সালে রাজ্যে সরকার গঠন করে তৃণমূল। সেই সময় তাদের শরিক ছিল কংগ্রেস। এর পর ২০১৬ সাল পর্যন্ত মূলত বামেরাই ছিল তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ। কিন্তু ক্রমে পরিস্থিতি বদলেছে। কমতে কমতে আসন সংখ্যার নিরিখে কার্যত প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে সিপিএম। উল্টো দিকে, ডালপালা মেলছে বিজেপি। আর এই অবস্থায়, ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বিজেপির রাজ্য সভাপতির মন্তব্যে নিঃসন্দেহে ঘোলা হবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির জল।