কলকাতা: রাজ্যে বিরোধী শক্তিদের পরাস্ত করতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক প্রশাসনিক সভায় মহিলাদের নিদান দিয়েছিলেন 'লাঠি ঝাঁটা হাতে প্রতিরোধ' গড়ে তুলতে। কিন্তু সন্দেশখালি যেন উলটপুরাণ! এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা 'ফেরার' শেখ শাহজাহান এবং তাঁর ঘনিষ্টদের গ্রেফতারের দাবিতে সন্দেশখালিতে লাঠি-ঝাঁটা নিয়ে বিক্ষোভে নামলেন মহিলারাই। শাসকদলের বিরুদ্ধে এমন জনরোষ সাম্প্রতিককালে কার্যত বেনজিরই বটে, মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
ইডির অফিসারদের রক্তাক্ত করা হামলার পর থেকেই অন্তরালে সন্দেশখালির 'বেতাজ বাদশা'। এলাকায় তিনি পরিচিত 'সন্দেশখালির বাঘ' নামেই। জলে থেকে যেমন কুমিরের সঙ্গে লড়াই করা যায় না, তেমন সন্দেশখালিতে থেকে শাহজাহানের বিরুদ্ধাচরণ করা একই, এমনটাই দাবি করেছেন স্থানীয়রা। সেই নেতা 'অন্তরালে' যেতেই প্রকাশ্যে জনরোষ।
কী কী অভিযোগ?
গতকাল থেকেই উত্তপ্ত ছিল পরিস্থিতি। তবে এদিন যেন জনরোষের বাঁধ ভাঙল। পুলিশের সঙ্গে তুমুল বচসায় জড়ান মহিলারা। লাঠি হাতে থানার সামনে বিক্ষোভও দেখান তারা। তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান আর তাঁর সহযোগী শিবু হাজরা, উত্তম সর্দাররা গত ১৩ বছর ধরে অত্যাচার চালিয়েছেন। সন্দেশখালিতে পাহাড়সম অভিযোগ গ্রামবাসীদের।
তাঁদের অভিযোগ, কখনও যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে, কখনও চাষের জমি দখল করে মাছের ভেড়ি বানিয়েছেন শিবু হাজরা, উত্তম সর্দাররা। প্রাক্তন পুলিশ কর্মীর অভিযোগ, ভেড়ির জন্য তাঁর ভিটেবাড়ির ১০ কাঠা জমি কেটে নিয়েছিলেন তৃণমূল ব্লক সভাপতি শিবু হাজরা। গ্রামবাসীদের সকলেরই দাবি, তৃণমূলের দাদাগিরিতে আপত্তি জানালেই জুটত কোদালের বাঁট দিয়ে মার। শেখ শাহজাহান বেপাত্তা হওয়ার পর থেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছে গোটা সন্দেশখালি।
এবিপি আনন্দর ক্যামেরাতেও সেই ক্ষোভ ধরা পড়ে। বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী এক মহিলার কথায়, 'আমরা দিনের পর দিন অনেক সহ্য করেছি। সন্দেশখালির মানুষ খুব শান্তিপ্রিয়, আমরা ভিতু প্রকৃতির। কিন্তু গত ১৩ বছর ধরে শাহজাহানরা অত্যাচার চালিয়েছে। তা সহ্য করতে না পেরেই আমরা বাধ্য হয়ে প্রতিবাদে নেমেছি।'
কিন্তু এত বছর পর কেন প্রতিবাদ?
প্রতিবাদকারিনীর কথায়, 'ভয়ে এত বছর ধরে চুপ ছিলাম। স্বামী-সন্তানকে হারানোর ভয়ে চুপ ছিলাম। সারাক্ষণ হুমকি দিত সাদা শাড়ি ধরানোর, বাচ্চাকে কিডন্যাপ করার। শাহজাহান এই সন্দেশখালিতেই আছে। পুলিশ প্রোটেকশনে রয়েছে। দিন কয়েক আগেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।'
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে