সমীরণ পাল, বারাসাত : উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিকাশ স্থায়ী সমিতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হল কর্মাধ্যক্ষ শেখ শাহজাহানকে। জেলা পরিষদের ঘর থেকে খুলে নেওয়া হয়েছে তাঁর নেমপ্লেটও। এনিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, তাঁর কুকর্মের জন্য দল তাঁকে বহিষ্কার করেছে। অনেকদিন ধরে জেলা পরিষদে তাঁর দফতরের যে সমস্ত কাজ সেইসব পরিষেবা মানুষ পাচ্ছিলেন না। সে কারণেই তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং গোটা প্রক্রিয়াটাই জেলা পরিষদের আইন মোতাবেক হয়েছে।


যদিও এনিয়ে বিরোধীরা রাজ্যের শাসক দলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, জেলা পরিষদের পদ থেকে সরাতে গেলে যে আইন সে প্রক্রিয়ায় সরানো হয়েছে বলে মনে হয় না। কিন্তু অস্বস্তি কাটাতে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।


বিজেপি নেতা তাপস মিত্রের বক্তব্য, ভোট বৈতরণী পার হতে ও নিজেদের স্বচ্ছতা প্রকাশ করতে লোকসভা নির্বাচনের আগে ব্যাকফুটে থাকা জেলা তৃণমূল কংগ্রেস শেখ শাহাজাহানকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে । 


সন্দেশখালিতে ইডির ওপরে হামলার ঘটনার ৫৬ দিনের মাথায় গ্রেফতার করা হয় শেখ শাহজাহানকে। ভিন রাজ্য বা দূরের কোনও জায়গা থেকে নয়, মিনাখাঁ থেকে দাপুটে তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। গত বুধবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির একটি মন্তব্যের পরই, শেখ শাহজাহানকে পুলিশের হঠাৎ গ্রেফতারি ঘিরে নানান প্রশ্ন তোলে বিরোধী শিবির। এদিকে গ্রেফতারির পর পরই তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হন সন্দেশখালির দাপুটে নেতা শেখ শাহজাহান। আগামী ছ'বছরের জন্য তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড করা হয় তাঁকে। দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কারণ, বছরের পর বছর সন্দেশখালিতে তিনি অত্যাচার চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। নারী নির্যাতন, জমি জবরদখল-সহ অভিযোগের পাহাড় জমেছে তাঁকে ঘিরে। এত দিন পর কেন হুঁশ ফিরল তৃণমূলের, উঠছে প্রশ্ন। (Sheikh Shahjahan)


এদিকে গ্রেফতারির আগে ৫৫ দিন ধরে সন্দেশখালি এলাকাতেই ছিলেন শেখ শাহজাহান। CID-র জেরায় এমনই দাবি করেছেন সাসপেন্ডেড তৃণমূল নেতা, খবর সূত্রের। CID সূত্রে খবর, জেরায় শেখ শাহজাহান স্বীকার করেছেন, ৫ জানুয়ারি ED-র আধিকারিক ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর হামলার পর, তাঁরা ফিরে যাওয়ার পর, বাড়ির সামনেই ভেড়িতে গিয়ে অনুগামীদের নিয়ে ছোটখাটো বৈঠক করেন সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা। শিখিয়ে দেন কী বলতে হবে। ওই দিনই স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের সদ্য বিবাহিত বড় মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেন শেখ শাহজাহান। এরপর নিজেও ডেরা পাল্টেছেন নিয়মিত। সন্দেশখালির বিভিন্ন দ্বীপে অনুগামীদের বাড়িতে পালা করে থাকতেন তৃণমূল নেতা। CID-র জেরায় তা স্বীকার করেছেন বলে সূত্রের খবর।