রুমা পাল, ঝিলম করঞ্জাই এবং বিটন চক্রবর্তী, কলকাতা: সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে যে সব মহিলারা প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন, তাঁরা কারা? সেই পরিচয় খোলসা করতে গিয়ে বেলাগাম মন্তব্য করলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলাপরিষদের সভাধিপতি ও তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী। তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। নিন্দায় সরব হয়েছেন বিশিষ্টদের একাংশ। 


সন্দেশখালির মহিলাদের একাংশের গুচ্ছ গুচ্ছ ভয়ঙ্কর অভিযোগ। কয়েকদিন আগেও যারা লাঠি-ঝাঁটা হাতে রাস্তায় নেমেছেন, আজ তাঁরা ভয়ে-আতঙ্কে-উদ্বেগে মুখ ঢাকছেন। আর এই আন্দোলনকারী মহিলাদের সম্পর্কেই এবার বেলাগাম মন্তন্য করলেন তৃণমূল বিধায়ক ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি, অর্থাৎ যাঁর পদ কি না, রাজ্যের একজন ক্যাবিনেটমন্ত্রীর সমতুল....সেই নারায়ণ গোস্বামী। 


কী বলেছেন তিনি? 


অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী বলেন, 'একটা তফশিলি আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ হতে গেলে, তাঁদের দৈহিক গঠন এবং দেহের রঙ দিয়ে কিন্তু বোঝা যায়। রিমেম্বার ইট। তাঁদের শারীরিক গঠন এবং শরীরের যে রং, তথাকথিত আমরা বলি ফর্সা, শ্যামবর্ণ, এই দেখে কিন্তু বোঝা যায়। কিন্তু ক্যামেরার সামনে যে সমস্ত মহিলারা এসেছেন, তাঁরা সব ধবধবে ফর্সা'। 


এক্সতিনি এও বলেন, 'সন্দেশখালির বাসিন্দাদের নিয়ে আমরা আলাদা করে বসি। যেমন, তাঁরা বললেন ধর্ষণের কোনও অভিযোগ তাঁরা জানেন না, হয়নি। এটা বাড়তি কথা বলছে। এবং আরও একটা যুক্তিসঙ্গত কথা বললেন, যে কথাতে আমার মনে হল, যুক্তি আছে। বলল, তফশিলি আদিবাসী সম্প্রদায়ের যে মানুষগুলো, যারা অত্যাচারিত, যারা ধর্ষিত, যারা টিভির সামনে এসে বলল, কারা বলল? একটা তফশিলি আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ হতে গেলে, তাঁদের দৈহিক গঠন এবং দেহের রঙ দিয়ে কিন্তু বোঝা যায়। রিমেম্বার ইট। তাঁদের শারীরিক গঠন এবং শরীরের যে রং, তথাকথিত আমরা বলি ফর্সা, শ্যামবর্ণ, এই দেখে কিন্তু বোঝা যায়। কিন্তু ক্যামেরার সামনে যে সমস্ত মহিলারা এসেছেন, তাঁরা সব ধবধবে ফর্সা! তাহলে কি তাঁরা সিডিউলড ট্রাইব, তাহলে কি তাঁরা আদিবাসী জনগোষ্ঠী?' 


তিনি বলেন, 'আমরা এটা দলগতভাবে অনুসন্ধান করছি। দরকার হলে পুলিশ-প্রশাসনকেও দেব। যে মুখগুলোকে সামনে আনা হয়েছে, তাঁরা সিপিএমের মহিলা সমিতির সদস্যা। কেউ আশাকর্মী, কেউ ICDS-এর কর্মী। ঘটনা যা ঘটেছে, সেটাকে অনেক বড় করে আরও কিছু চিত্রপরিচালক, চিত্রনাট্য, এর মাধ্যমে সারা বাংলায় একটা কৃত্রিম অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছে।'


এই মন্তব্য নিয়েই নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'আমি তফশিলি জাতি উপজাতি কমিশনকে বলব, এই নারায়ণ গোস্বামীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় SC-ST আইনে FIR করা উচিত।' 


শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের মতো শাসক নেতার বিরুদ্ধে সন্দেশখালি যখন ফুঁসছে তখন, অভিযোগকারিণীদের পরিচয় নিয়েই প্রশ্ন তুললেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী। 


বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'অত্যন্ত আপত্তিকর। নিম্নরুচির, সংকীর্ণ মানসিকতার এই বক্তব্য তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে অপ্রত্যাশিত নয়। এদের মন্ত্রীরা আগে দ্রৌপদী মুর্মুর গায়ের বর্ণ নিয়ে কথা বলেছে। এদের (তৃণমূল) নেতারা কখনও জগদীপ ধনকড়কে তাঁর শারীরিক আকৃতি নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন। কখনও সি ভি আনন্দ বোসকেও ব্যঙ্গ করেছেন।'


সব মিলিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে।