সমীরণ পাল, প্রকাশ সিন্হা ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায়, কলকাতা: শুধু এখনকারই নয়, শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে আগের অভিযোগেও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। ২০১৯ সালে খুনের ঘটনায়, তৃণমূল-বিজেপি দু'দলই FIR দায়ের করেছিল। তৃণমূলের তরফে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তাদের প্রত্য়েকের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। কিন্তু বিজেপির অভিযোগপত্রে নাম থাকা শেখ শাহজাহানের নাম নেই চার্জশিটে!


ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে সন্দেশখালি (Sandeshkhali incident)। আর যে সমস্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন সেখানকার মানুষ তার কেন্দ্র বিন্দুতে একজন-  সন্দেশখালি এক নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শেখ শাহজাহান। গত ৫ জানুয়ারির পর এখনও ৫৩ দিন ধরে যিনি অধরা। কিন্তু, শুধু এবারই নয়, অভিযোগ, এর আগেও একাধিক ক্ষেত্রে শেখ শাহজাহানের ক্ষেত্রে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি পুলিশ। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোট পরবর্তী হিংসায় সন্দেশখালির ভাঙ্গিপাড়া গ্রামে ৩ বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনায় FIR-এ নাম ছিল শেখ শাহজাহানের। ন্য়াজাট থানায় খুন ও অস্ত্র আইনে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ঘটনায় তৃণমূল ও বিজেপি দু'দলই থানায় FIR করেছিল। তৃণমূলের তরফে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তাদের প্রত্য়েকের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হলেও, বিজেপির অভিযোগপত্রে নাম থাকা শেখ শাহজাহানের নাম ছিল না চার্জশিটে!


বিজেপি রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'আমাদের তিন জন কর্মীকে খুন করেছে। তার মধ্যে একজনের দেহ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। একটার পর একটা অভিযোগ জানালেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।'


ভাঙ্গিপাড়া গ্রামে ভোট পরবর্তী সংঘর্ষে ২০১৯ সালে খুন হয়েছিলেন বিজেপি কর্মী প্রদীপ মণ্ডল। তারপর থেকে আতঙ্কিত তাদের পরিবার। এখনও পরিবারের লোকজন এখানে বসবাস করে না। তার মা বাড়িতে আছেন। এতটাই আতঙ্কিত বলতে চাইছেন না। প্রদীপ মণ্ডল ও সুকান্ত মণ্ডলের মৃতদেহ পাওয়া গেলেও এত বছর পরও দেবদাস মণ্ডলের মৃতদেহ মেলেনি। নিহত বিজেপি কর্মী দেবদাস মণ্ডলের বোন বলেন, 'পার্টি করেই গন্ডগোল হয়েছিল। ওর বডি পাওয়া যায়নি।' পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন নিহত বিজেপি কর্মীর পরিবারের সদস্য়। পুলিশ কাউকে ধরেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এই বিষয়ে সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, 'আমি তো পুলিশ নই। আমি তো কিছু জানি না।'


এদিকে সোমবার হাইকোর্টে সন্দেশখালি সংক্রান্ত একটি মামলায় রাজ্য সরকারের আইনজীবী বলেন, শেষ ৪ বছরে ৪৩টি FIR হয়েছে। যার মধ্যে ৪২টিতে চার্জশিট হয়েছে। ধর্ষণের ধারাও যুক্ত আছে। বাকি তদন্ত চলছে। জমি দখলের অভিযোগে ৭টি FIR হয়েছে। সেগুলিতে চার্জশিট হয়েছে। ৮ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৪টি FIR হয়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ১৫ জনকে। যেখানে ১৪৪ ধারা ছিল, সেখানে যাননি রাজ্যের মন্ত্রীরা। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, 'তার মানে ৪ বছর ধরে এই ঘটনা ঘটছিল। কিন্তু কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিস্ফোরণ ঘটেছে। রাজ্য বলছে, যে জমি দখল করা হয়েছে, সেগুলি ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার মানে কিছু একটা ঘটেছে। আর কী প্রমাণের দরকার, সরাসরি সাজা দিতে হবে। আদালত বিস্মিত যে, ৪২টা মামলার চার্জশিট দিতে ৪ বছর কেন লাগল? পরে আমরা চার্জশিটও খতিয়ে দেখব। ক্রমাগত মানুষ ওখানে যাচ্ছেন, তার ফলে ভালও হতে পারে, আবার খারাপও হতে পারে। আইনকে আইনের পথে চলতে দেওয়া হোক।'


আরও পড়ুন: মঙ্গলে অমঙ্গলের ছায়া কাদের? কারা থাকবেন সাবধান? কী বলছে কালকের রাশিফল?