অর্ণব মুখোপাধ্য়ায়, প্রসূন চক্রবর্তী, প্রদ্যোৎ সরকার, কলকাতা: সন্দেশখালিতে অশান্তির ঘটনায় বাঁশদ্রোণীর ভাড়াবাড়ি থেকে তুলে এনে গ্রেফতার করা হয়েছিল সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে। তৃণমূলের তরফ থেকে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে যে সিপিএম, বিজেপিই সন্দেশখালির অশান্তির জন্য দায়ী। যদিও সন্দেশখালিতে (Allegation Against Sheikh Shajahan) শেখ শাহজাহান ও তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধেই লাগাতার উঠছে বেলাগাম অত্যাচার ও দখলদারির অভিযোগ। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ উঠলেও, সিপিএমের তৎকালীন বিধায়ক নিরাপদ সর্দার (Nirapada Sardar on Sandeshkhali) কেন তা প্রকাশ্যে আনেননি? এই প্রশ্ন তুলেই সন্দেশখালি নিয়ে বামেদের বিরুদ্ধে আক্রমণে নেমেছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই সুরেই আক্রমণ শানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।


তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Abhishek Banerjee on Sandeshkhali) বলেন, '২০১৬ অবধি তো সিটটা সিপিএমের ছিল। ২০১৬ অবধি তো সন্দেশখালিতে সিপিএমের প্রতিনিধি ছিল। ২০১৬ অবধি সিপিএমের বিধায়ক ছিল। এই সিপিএমের নেতা, বিজেপির নেতা...বিকাশ সর্দার, নিরাপদ সর্দার এরা কেন বলেনি প্রকাশ্যে মুখ খুলে?'


একই কথা বলেছেন তৃণমূলের রাজ্য় সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh on Sandeshkhali)। তাঁর দাবি, '২০০৩ থেকে ২০১৩- এই ১০ বছর কোথায় ছিল শেখ শাহজাহান? কাদের দলে ছিল? কার আন্ডারে ছিল? সিপিএমে ছিল, বামফ্রন্টে ছিল। নিরাপদ সর্দারদের সঙ্গে ছিল। তারপরে কাদের সঙ্গে ছিল? শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে ছবি আছে। তাহলে শেখ শাহজাহান যদি খারাপ কাজ পরের পর করে থাকে নিরাপদ সর্দার থেকে শুভেন্দু অধিকারী এরা কেন ইডি  সকালবেলা যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত কোনও অভিযোগ করল না?'


যদিও এই অভিযোগ মানতেই চাননি সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার। শাহজাহানদের বিরুদ্ধে আগেই বিধানসভায় জানিয়েছেন বলে পাল্টা দাবি করেছেন তিনি। তিনি বলেন, 'সব জানিয়েছি। সব জানিয়েছি বিধানসভাতে আমি। জমি লুঠ হয়েছে সব জানিয়েছি বিধানসভাতে। বিধানসভায় ১০০ বার জানিয়েছি। ২০১৩-১৪। আজকের শাহজাহানরা, শাহজাহানদের বিরুদ্ধে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে জানিয়েছি।'


পাশাপাশি তৃণমূলের প্রশ্নের জবাবে সোশাল মিডিয়ায়, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২০১৩ সালের বাজেট অধিবেশনে লিপিবদ্ধ...সন্দেশখালির তৎকালীন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের বক্তব্য তুলে ধরেছেন সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৩ সালেই ঘরছাড়া প্রসঙ্গ থেকে গণধর্ষণের হুমকির অভিযোগ পর্যন্ত তুলেছিলেন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার। যেখানে গণধর্ষণের হুমকির প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হচ্ছে, সেই সময়ই 'মাইক অফ হয়ে যায়' বলে লেখা রয়েছে বংশগোপাল চৌধুরীর পোস্টে শেয়ার করা বিধানসভার কার্যবিবরণীর ছবিতে।
 
তাহলে কি সন্দেশখালির 'যন্ত্রণা' আগেই সর্বসমক্ষে এনেছিলেন প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার? সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, 'বিধানসভায় উনি উল্লেখ করেছেন। সেই সময় খাদ্যমন্ত্রী উনি এখন জেলে আছেন, উনি গোটা বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছেন। নিরাপদ সর্দার একাধিকবার ডিএম ও এসপি-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন এবং সেটা বিধানসভাতে রেকর্ড করা আছে। কোনও ব্যবস্থা প্রশাসন নিতে পারেনি কারণ খাদ্যমন্ত্রী যিনি এখন জেলে আছেন ওঁর চাপ ছিল।'


সিপিএমের আরেক প্রাক্তন বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ও বিধানসভার অধিবেশনের লিপিবদ্ধ বেশ কিছু অংশ পোস্ট করেছেন। যার একটিতে দেখা যাচ্ছে, নিরাপদ সর্দারের নামে লিপিবদ্ধ বক্তব্যে বলা হয়েছে - 'জমি যাতে এরা ফেরত পায় এবং পুলিশ যাতে নিরপেক্ষভাবে বর্গাদারের পক্ষে কাজ করে, সেই দাবি করছি এই সভাতে।' কোনওটাতে লেখা, 'গত ৩১ শে মে সন্দেশখালি, জেরিয়াখালি গ্রাম পঞ্চায়েতে চারজন বর্গাদারকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছে। হঠাৎ করে ৩১ তারিখে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী জোর করে এদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নিয়েছে। পুলিশের কাছে এরা গেছে কিন্তু থানায় এফআইআর করতে পারেনি।'


সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, 'নিরাপদ সর্দার বিধানসভায় বলেছিল দীর্ঘদিন আগে। বিধানসভায় যখন বলা হয়েছে তখন সোনালি গুহ, আজকের বিজেপি নেত্রী মাইক বন্ধ করে দিয়েছেন। অভিযোগ তো ছিল। স্পিকার তখন বলেছেন রেকর্ডে আছে, এটা পুলিশের ব্য়াপার। তাহলে পুলিশমন্ত্রী জবাব দিন পুলিশ দেখেনি কেন?'


আরও পড়ুন: পেটিএম পেমেন্টস ব্যাঙ্কের বোর্ড থেকে ইস্তফা বিজয়শেখর শর্মার