কলকাতা: সঙ্গীত জগতে ফের নক্ষত্রপতন। প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তাঁর স্মৃতিচারণায় এদিন সঙ্গীতশিল্পী অন্তরা চৌধুরী বলেন, “বিরাট ক্ষতি। বাবার অত্যন্ত প্রিয় শিল্পী ছিলেন। বাবার অনেক গান বাবা যেন লতা মঙ্গেশকর , সন্ধ্যা পিসির জন্যই রেখে দিতেন। তাঁদের দিয়ে সেই গান গাওয়াবেন বলে। একটা যুগ শেষ হয়ে গেল। ১৪-১৫ বয়স আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। গান শোনাতে বললেন। গান শুনে পিসি বললেন খুব ভাল গান গেয়েছো। মা আর পিসির অনুষ্ঠানে ঠিক হয় মা পরে গান করবেন আগে সন্ধ্যা পিসি। মা তখন বলেছিলেন সন্ধ্যাদি গাইলে আমার গান কে শুনবে? শুনে মাকে গান আগে গাইতে বলেন সন্ধ্যা পিসি। ভীষণ মানুষ ছিলেন।''


শোকপ্রকাশ করে মাধবী মুখোপাধ্যায় বলেন, "সন্ধ্যাদির যখন প্রথম গান বেরলো, তখন আমি খুব ছোট। ওগো মোর গীতিময় গানটা যখন বেরলো তখন আমি খুব ছোট। এই গানটা আমিও পরবর্তীকালে ওকে শুনিয়েছি। সন্ধ্যা দির সঙ্গে যেখানেই যেতাম আমাকে বলতেন মাধবী গান গাও। এমন সম্পর্ক ছিল। ঝিনুক ওর মেয়ে তখন খুব ছোট, ওর জন্মদিনে আমাদের আলুর চপ করে খাইয়েছেন। কখনও ওঁকে মনে হত মা, কখনও মনে হত দিদি, কখনও বন্ধু। এমন সম্পর্ক ছিল। কি যে বলব বুঝতে পারছি না। গানের জগতের মাতৃবিয়োগ বলে না। তেমনই হল। সেই মাতৃবিয়োগ হল। আর মায়ের কাছ থেকেই তো সন্তানরা শিক্ষা পান। ওঁর গান শুনেই আমরা শিক্ষা পেয়েছি। ওঁর গান কেউ গাইতে পারবেন না। আমার মনটা এত খারাপ লাগছে বোঝাতে পারছি না।''


কোভিডকে হারালেও, জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন ৯০ বছরের কিংবদন্তী। ২৭ জানুয়ারি থেকে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, আজ হঠাৎ করেই শিল্পীর রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের অংশে নতুন করে ব্যথা অনুভব করছিলেন তিনি। সন্ধে সাড়ে সাতটায় চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন বাংলা সঙ্গীত জগতের নক্ষত্র। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রথম শিক্ষাগুরু ছিলেন যামিনী গঙ্গোপাধ্যায়। ছ’বছর তাঁর কাছে তালিম নিয়েছিলেন তিনি। বেগম আখতার নিজের হাতে তানপুরা বাঁধতে শিখিয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে। উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খানের কাছে সঙ্গীতশিক্ষা নিয়েছেন। সিনেমার গানের পাশাপাশি লোকসঙ্গীত, কীর্তন, ভজন, রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং নজরুলগীতিও গেয়েছেন তিনি। গেয়েছেন হিন্দি সিনেমাতেও। পরবর্তীকালে রাজ্য সরকারের সঙ্গীত অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান ছিলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কাল বেলা ১২টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মরদেহ রাখা থাকবে রবীন্দ্রসদনে। পূর্ণ মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে উত্তরবঙ্গ সফর কাটছাঁট করে ফিরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়


আরও পড়ুন: Sandhya Mukhopadhyay Demise: বিশ্বের সঙ্গীত জগতের স্বর্ণযুগের অবসান: শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়