কলকাতা: গান স্যালুটে চিরবিদায়।চোখের জল...আক্ষেপ...প্রিয়জন হারানোর বেদনা।  সব পিছনে ফেলে পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গেলেন গীতশ্রী  সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukhopadhyay)।  সন্ধ্যা ঘনাল সঙ্গীতের আকাশে।  সুরলোকে চলে গেলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। চিরতরে বিদায় নিলেন।শুধু রয়ে গেল তাঁর সুর, তাঁর কালজয়ী গান।


‘ঘুম ঘুম চাঁদ, ঝিকিমিকি তারা, এই মাধবী রাত
আসেনি তো বুঝি আর, জীবনে আমার..’


বুধবার সকাল থেকেই কান্না ভেজা গলায়, শিল্পীর গুণমুগ্ধরা বলছেন, সত্যিই তো,...তোমাকে ছাড়া এ’রাত, আসেনি জীবনে আমার।


মঙ্গলবার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুর পর, পূর্ণ মর্যাদায় শিল্পীর শেষকৃত্যের কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী! সেই মতো সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে দেওয়া হয় গান স্যালুট। শিল্পীর মরদেহ নিয়ে শেষযাত্রায় পা মেলান মুখ্যমন্ত্রী।


রাতে পার্ক সার্কাসের পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা হয় শিল্পীর মরদেহ। বুধবার সকালে, সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে আসা হয় লেক গার্ডেন্সের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমিতে। আমৃত্যু সঙ্গীত অ্যাকাডেমির সভাপতি ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।  এখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে, কান্নায় ভেঙে পড়েন রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমির আহ্বায়ক দেবজ্যোতি বসু।


পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি থেকে মরদেহ আনা হয় রবীন্দ্র সদনে। এখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী...সাংসদ ও বিধায়ক। সাড়ে এগারোটা থেকে এখানেই শায়িত রাখা হয় গীতশ্রীর মরদেহ। এখানেই পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী...উস্তাদ রাশিদ খান...ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত...বিক্রম ঘোষ...শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়,  ইন্দ্রাণী সেন, শিবাজী চট্টোপাধ্যায়, অরুন্ধতী হোম চৌধুরী, সৈকত মিত্র, তন্ময় বসু,  হরনাথ চক্রবর্তী...চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন...প্রমিতা মল্লিকরা এসে শ্রদ্ধা জানান।


বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারও এখানে শেষ শ্রদ্ধা জানান শিল্পীকে। রবীন্দ্র সদনে এসে শিল্পীকে শেষশ্রদ্ধা জানান প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য। রবীন্দ্র সদনে এসে গীতশ্রীকে শ্রদ্ধা জানান...সিপিএম...কংগ্রেস ও বিজেপির নেতারাও। 


এর, মধ্যেই দুপুরে উত্তরবঙ্গের কর্মসূচি কাঁটছাট করে, কলকাতায় ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী। রবীন্দ্র সদনে গিয়ে গীতশ্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


গীতিকার শ্যামল গুপ্তের সঙ্গে বিবাহের পর, লেক গার্ডেন্সের এই বাড়িতে আসেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। অসুস্থতার পর, এই বাড়ি থেকেই হাসপাতালে ভর্তি হন।আর ফেরা হল না। 


সুচিত্রা সেনের লিপে সব থেকে বেশি গান গেয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। একবার, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে বেলুড়মঠে নিয়ে গিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। সেই সব স্মৃতিই এখন উঠে আসছে, শিল্পীর আপ্তসহায়কের কথায়।হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দের সঙ্গে একাধিক অনুষ্ঠান করেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ে। স্মৃতিতে উঠে আসছে সেই সব কথাও।প্রতিটা অনুষ্ঠানের আগেই, যন্ত্র-শিল্পীদের নিয়ে অনুশীলন করতেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।  
পৌঁনে পাঁচটা নাগাদ গীতশ্রীর মরদেহ রবীন্দ্র সদন থেকে বের করা হয়। ফুল দিয়ে সাজানো শকট রওনা দেয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানের দিকে।শেষযাত্রায় অংশ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্র সদন থেকে হেঁটে কেওড়াতলা মহাশ্মশান পর্যন্ত যান মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন, রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী-বিধায়ক ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অনুরাগীরা।


রাস্তার পাশে তখন অগণিত গুণমুগ্ধের ভিড়। শিল্পীকে শেষ বারের মতো দেখতে ভিড় করেন বহু মানুষ। শববাহী গাড়ি যখন ধীর গতিতে শ্মশানের দিকে এগোচ্ছে...বাজছে গীতশ্রীর গান...তখন, রাস্তার ধারে চোখে জল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অসংখ্য গুণমুগ্ধকে!


এরপর, কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শিল্পীকে পূর্ণ মর্যাদায় শেষবিদায় জানানো হয়। শ্মশান জুড়ে তখন বিউগলের সুর।তার মধ্যেই গান স্যালুট।  মঙ্গলবার, একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। পঞ্চভূতে মিলিয়ে গেলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। কিন্তু, গুণমুগ্ধদের মনে তিনি থেকে যাবেন চিরদিন।