ভাস্কর ঘোষ, বেলুড়, হাওড়া: চিরাচরিত রীতিনীতি মেনে বসন্ত পঞ্চমীর পূণ্য তিথিতে বেলুড় মঠের বাগদেবীর আরাধনা (Saraswati Puja 2024 in Belur)। মূল মন্দিরের পূর্ব দিকে দেবী সরস্বতীর পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারী মহারাজরা বেলুড় মঠের নিয়ম মেনেই সরস্বতী পুজোর শুরু করেছেন।সকাল থেকেই সরস্বতী পুজোর বিশেষ দিনে বেলুড়মঠে ভক্তদের সমাগম। ছোট ছোট শিশুদের সঙ্গে করে নিয়ে তাদের পরিবারের লোকজন হাতেখড়ি দিতেও নিয়ে এসেছেন।
বাংলার ঘরে ঘরে আজ বাগ্ দেবীর আরাধনা। পঞ্চমীতে বিদ্যার আরাধনা পাড়ায়, সকুলে, কলেজে পডুয়ারা ব্রতী সরস্বতী বন্দনায়। এদিন তাই খুদেদের হাতেখড়ি। গুরুমশাইয়ের হাত ধরে লেখা শুরু, শেখা শুরু আমরি বাংলা ভাষার অ- আ- ক- খ। সরস্বতী পুজোর সন্ধ্যায় বাংলা ভাষা শেখার জন্য হাতেখড়ি হল কচিকাঁচাদের। ব্রহ্মার মানসকন্যা সরস্বতী৷ এক হাতে তাঁর বীণা, অন্যহাতে পুস্তক৷ তাই পুস্তকের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক সকলেই ব্যস্ত তাঁর আরাধনায়৷ বিদ্যার্জন সহজ না হলেও দেবী কিন্তু অল্পেই সন্তুষ্ট৷ সামান্য ফুল,মিষ্টি, বেলপাতা আর দোয়াত-কলম৷ মন্ত্রতন্ত্র, নিয়মকাননুও তেমন কিছু নয়৷
সরস্বতী কিন্তু কল্যাবিদ্যারও দেবী৷ তাই শিল্প সাধনা যাঁরা করেন, তাঁরাও আজ পুজোয় ব্যস্ত৷ বাগদেবী শ্বেতশুভ্র৷ কিন্তু বাঙালি তাকে নিজের মনের রঙ মিশিয়ে বসন্তের শুরুতে করেছে বাসন্তী বর্ণা৷ তাঁর সঙ্গে রঙ মিলিয়ে সাজে পূজারীণিরাও৷ সকালে ছিল আকাশের মেঘলা। বেলা বাড়তেই গুমোট ভাব বেড়েছে৷ তার মধ্যেই পুজোর অর্ঘ্য নিবেদন, আর শাড়ির বাসন্তীতে কুড়িয়ে পাওয়া একসমুদ্র আবেগ। ভালোলাগার রঙিন একটা দিন৷ এদিন সকাল থেকেই শহরের ইতিউতি নীল-সাদা-হলুদ-লালদের মিছিল৷ পাটভাঙা সিল্ক-তাঁত আর আনকোরা পাঞ্জাবির মেকওভার৷ সরস্বতী পুজো বলে কথা৷ বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে।
আরও পড়ুন, সরস্বতী পুজোয় ঘূর্ণাবর্তের বৃষ্টি, দুর্যোগ কাটবে কবে ? জানাল হাওয়া অফিস
অপরদিকে, প্রায় দেড়শো বছরের পুরোনো আন্দুল রাজবাড়িতে আজও বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে মা সরস্বতীর আরাধনা হয়ে আসছে। গতকাল সন্ধ্যায় রাজবাড়ির ঠাকুর দালানে আনা হয় ডাকের সাজে মা সরস্বতী। এই রাজবাড়ীতে যে ঐতিহ্য মেনে প্রতিবছর দুর্গা পুজো হয়, সেই ঐতিহ্য মেনেই হয়ে আসছে সরস্বতী পুজো। ভোর বেলায় বাড়ির মহিলারা স্নানের পর নতুন শাড়ি পরে নৈবেদ্য সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ আবার ব্যস্ত হয়ে পড়েন ঠাকুর দালানে আলপনা দিতে। এই কাজে হাত লাগান বাড়ির ছোট থেকে বড় সব মেয়েরা।এরপর চলে ভোগ রাঁধার পর্ব। পুজো হয় বৈদিক শাস্ত্র মতে। পুষ্পাঞ্জলি দেন বাড়ির ছোট বড় সকলেই। পুজোর পর প্রসাদ বিতরণ চলে। বিকালে গ্রামবাসীদের মধ্যে ভোগ বিতরণ করা হয়। সন্ধ্যায় হয় মায়ের আরতি। মাঝে কয়েক বছর পারিবারিক কারণে পুজো বন্ধ হলেও নতুন প্রজন্ম নতুন উৎসাহে ফের শুরু করে পুজো।