কলকাতা: টেটের ওএমআর শিটে গুপ্ত সঙ্কেত? ২টি প্রশ্ন আর উত্তরের মধ্যেই লুকিয়ে দুর্নীতির রহস্য? নেপথ্যে প্রত্যক্ষভাবে মানিক ভট্টাচার্য এবং কুন্তল ঘোষের হাত ছিল! জেলবন্দি মানিক ভট্টাচার্যের জামিন আর্জির বিরোধিতায় আদালতে এমনই বিস্ফোরক দাবি করল ইডি। ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি দাবি করেন, কুন্তল ঘোষকে জেরায় জানা গেছে, চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে যাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হত, তাদের ২টি প্রশ্ন এবং তার উত্তর আগে থেকেই বলে দেওয়া হত।
বলা হত, OMR শিটে ওই ২টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। বাকি উত্তরপত্র ফাঁকা থাকবে। যাতে পরে সেই OMR দেখলে, টাকা দেওয়া চাকরিপ্রার্থীকে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। পরে সেই OMR শিটে, বসিয়ে দেওয়া হত উত্তর। বুধবার নগর দায়রা আদালতে ইডির দায়ের করা পিটিশনে দাবি করা হয়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্যের যুগলবন্দিতেই আত্মসাৎ হয়েছে দুর্নীতির বিপুল টাকা! আর কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি অনুযায়ী, এই দুর্নীতির ত্রিভূজে যুক্ত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষও। ইডির দাবি, বেসরকারি, বিএড ও ডিএলএড কলেজকে অনুমোদন এবং নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দেওয়ার নামে ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকা যেত তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। মানিক ভট্টাচার্যকে দিতে হত ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা।
অন্যদিকে স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নতুন মোড়! কলকাতা হাইকোর্টে বারবার ভর্ৎসিত হওয়ার পর, অবশেষে দুর্নীতির কথা মেনে নিয়ে, নবম-দশমে ৮০০ জনেরও বেশি সুপারিশপত্র বাতিল করতে চলেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু হবে সুপারিশপত্র বাতিলের প্রক্রিয়া।
জানালেন SSC-র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার।
২০১৬-র নবম-দশমে চাকরির পরীক্ষায় ব্যাপক গরমিলের অভিযোগ উঠেছে। অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীর OMR শিট ও SSC-র সার্ভারে উল্লেখিত প্রাপ্ত নম্বরের মধ্যে বিস্তর ফারাক ধরা পড়ে। যেমন হাইকোর্টে সিবিআই দাবি করেছিল, অনেকেই সাদা খাতা জমা দিলেও, SSC-র সার্ভারে কারও প্রাপ্ত নম্বর দেখা যায় ৫০, কারও ৫২ তো কারও ৫৩! এরপরও কেন অযোগ্যদের চাকরি বাতিল করা হচ্ছে না?
এই প্রশ্ন তুলে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে রীতিমতো ভর্ৎসনা করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। গত ৩১ জানুয়ারি, SSC-র আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি বলেছিলেন, সব কি আদালতের দায়িত্ব? কেউ ঠকিয়ে চলে গেল আর আপনারা চুপ করে বসে থাকবেন? এত ভয় কেন?
যা হয়েছে তা ভুলে গিয়ে এগিয়ে চলুন। নিজের ক্ষমতা কেন প্রয়োগ করছেন না? আপনাদের চেয়ারম্যানকে বলুন, অযোগ্যদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার জন্য। এর প্রেক্ষিতে SSC আদালতকে জানায়, তাদের ১৭ নম্বর ধারা প্রয়োগ করে তারা অযোগ্যদের সুপারিশপত্র বাতিল করতে পারে।
কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে,প্রথমে ৯৫২ জনের প্রাপ্ত নম্বরের ক্ষেত্রে গরমিল ধরা পড়েছিল। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ১৫ জনের ১ নম্বর করে বাড়ে। বাকি ৯৩৭ জনের সবাইকে সুপারিশপত্র দেওয়া হয়নি।
সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছে ৮০০-র কিছু বেশি অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীকে। তাঁদেরই সুপারিশপত্র বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। সুপারিশপত্র বাতিল হলে, স্বাভাবিকভাবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দেওয়া নিয়োগপত্রও বাতিল হবে।