কলকাতা: সাংবাদিকতা তাঁর পেশা। নেশা আর প্রেম সাহিত্য। লিখতে বসে দুই সত্তাকে কোন এক অদৃশ্য সুইচে আলাদা রাখেন। চরৈবেতির মতো একটা মন্ত্র তাঁর কানে বাজে 'রোজ লিখতে হবে।' তিনি সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত। কৃতিত্বের নজির গড়ে সাহিত্য ক্ষেত্রে সেরা বাঙালির সম্মান পেলেন প্রচেত গুপ্ত। 


সময় বদলের সঙ্গে পাঠক শ্রেণির পরিবর্তন: "সমৃদ্ধ করেছি কি না বলতে পারব না। তবে সময় বদলায়, পাঠকের জীবন-যাপনও বদলায়। একটা সময় যে প্রযুক্তি তখনকার পাঠকরা দেখেননি সেই প্রযুক্তি এখনকার পাঠকরা দেখতে পাচ্ছেন। ফলে অভ্যাসও বদলেছে কিছুটা। সত্যিকারের সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি এটার ক্ষেত্রে সময় প্রভাব ফেলে ঠিকই, তবে মন-দর্শনটা একই থেকে যায়। মূল্যবোধের হয়ত পরিবর্তন হয়, কিন্তু কোর যেটাকে আমরা বলি সেই বেঁচে থাকার দর্শন একই থেকে যায়। পুরনো দিনের যে কালজয়ী সাহিত্য সে তো আজও রয়ে গেছে।''


 



পড়ার জন্য প্রযুক্তিগত মাধ্যম: "সাহিত্যের ক্ষেত্রে পড়ার জন্য প্রযুক্তিগত মাধ্যম বদলেছে। গুহার গায়ে ছবি আঁকা যেমন আজও সংরক্ষিত রয়েছে, আবার কেউ ট্যাবে ছবি আঁকলে সেটাও থাকবে মানুষের মনে। মাধ্যম বদলালেও মূল বিষয় বদলায় বলে মনে হয় না। এটা শুধু বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে নয়। অন্যান্য যেসব দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে গিয়েছে, সেখানেও তো প্রচুর মানুষ বই পড়ছেন। বই পড়াটা একটা অন্য মনের ব্যাপার। এটা কোনও মাধ্যম প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। কী পড়ছে সেটাই পাঠকের মনে থাকছে। কীভাবে পড়ছে সেটা নয়।''


"আমি পেশায় সাংবাদিক। লিখি নেশায়। একটা কাজ করি নিজের পেশা জীবন অর্থাৎ সাংবাদিকতার সঙ্গে আমার লেখা জীবন কখনই এক হয়ে যায় না। বোধহয় আমার আমাক মাথায় সুইচ আছে। এটা বন্ধ রাখি। সাংবাদিকতার জীবনে সমাজের অনেকটা দেখা জানা যায়, সুযোগ আছে। সেই সুযোগ অবচেতনে কাজ করে। একটা ঘটনা দেখে সেটা লেখায় নিলাম এরকম কখনও ঘটেনি। কিন্তু যে ঘটনাটা দেখি হয়ত সাংবাদিক হিসেবে দেখি, হয়ত সাধারণ মানুষ হিসেবেই দেখি, হয়ত অবচেতনে থেকে যায়, তার একটা প্রভাব লেখায় পড়ে। আবার সাংবাদিকতায় সাহিত্য এসে পড়ে এমনটা নয়। তখন সাংবাদিকতাই করি।'' 


সেরা বাঙালির অনুভূতি: "১৮ বছরের অনুষ্ঠান, এত গুণী মানুষদের সঙ্গে থাকতে পারব, এটা সত্যি বিশ্বাস হয়নি। আমার বাবা ক্ষেত্র গুপ্ত এবং মা জ্যোৎস্না গুপ্ত দুজনের কথা খুব মনে পড়ছ। দুজনেই প্রয়াত। সেরা হতে হবে বলে বাবা-মা কোনওদিন বলেননি, তাড়নাও করেননি। সিলেবাসের বাইরে কিছু করতে ইচ্ছে করছে তাতে উৎসাহ জুগিয়েছেন। আবার সেরা উপার্জন করতে হবে বলে, আমার স্ত্রী মিত্রা গুপ্তও কোনওদিন তাড়না করেননি। আমার পরিবার-পরিজন থেকে পাঠক-সম্পাদক- প্রকাশক কোনওদিন কেউ বলেননি সেরা হতে হবে। ফলে যা করেছি মুক্ত মনে আনন্দের সঙ্গে করতে পেরেছি। আরও খানিকটা পথ হাঁটব। দেখব কেমন হয়। কোনও বাঙালিকে দেখে যেন পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তের মানুষ বলতে পারেন, ওই যে একজন বাঙালি আসছেন। উনি সেরা কারণ ওঁর মেরুদণ্ডটাও সেরা।''


আরও পড়ুন: Sera Bangali 2022: বাংলা সিনেমা একেবারেই ঠিক জায়গায় আছে, এক্সক্লুসিভ অনির্বাণ ভট্টাচার্য