রুমা পাল, শান্তনু নস্কর, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা:সামান্য ভাল থাকার জন্য ঘরবাড়ি ছেড়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি। সেখানে কোনওমতে মাথা গুঁজে থেকে, দিনরাত পরিশ্রম করে বাড়িতে টাকা পাঠানো। তা থেকেই চলে সংসার, পড়াশোনা করে সন্তান, সেই টাকা জমিয়েই কেউ বোনের বিয়ে দেন। এতটুকু ভাল থাকার জন্য এভাবেই লড়াই করে যান বাংলার গ্রামগুলির বহু বাসিন্দা। রেলের নিরাপত্তায় গলদের মূল্য জীবন দিয়ে চোকালেন এরাই। আবার এদের মৃত্যু নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনীতির দড়ি টানাটানি।  


কোথাও পিতা, কোথাও সন্তান, কোথাও ভাই- করমণ্ডল দুর্ঘটনায় জলে ভাসিয়েছে বহু পরিবারকে। এখনও অনেকের খোঁজ নেই। পেটের টানে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন কাজের খোঁজে। রুটি-রুজি খুঁজতে গিয়ে দুর্ঘটনায় চলে গেল প্রাণটাই। দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাসন্তীর ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনায়। শেষ হয়ে গেছেন একই পরিবারের ৩ ভাই। নিশিকান্ত গায়েন, হারান গায়েন ও দিবাকর গায়েন। ধান রোয়ার কাজের জন্য অন্ধ্রপ্রদেশ যাচ্ছিলেন ওই তিন ভাই। ছিলেন করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরল কফিনবন্দি দেহ। শোকে পাথর পরিবার-পরিজনরা। 


বাড়ি ছেড়ে এতদূর কি যেতেই হত? দুর্ঘটনায় মৃতের স্ত্রী বৃহস্পতি গায়েন বলেন, 'বারণ করেছিলাম। যেতে হল কাজ তো নেই।' একই কথা আরও এক গ্রামবাসী রেহানা পৈলানেরও, বললেন, 'হবে না কেন, এখানে কোনও কাজ আছে?'


শুধু গায়েন পরিবারের ৩ ভাই-ই নয়। একই পরিণতি হয়েছে ছড়ানেখালিরই বাসিন্দা সঞ্জয় হালদারেরও। অন্ধ্রপ্রদেশে চাষের কাজে যাচ্ছিলেন সঞ্জয়ও। রেলযাত্রা তাঁরও 'শেষযাত্রা'য় পরিণত হয়েছে। তাঁর স্ত্রী শান্তি হালদারও জানিয়েছেন এখানে কোনও কাজ না পেয়েই ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকেই অন্ধ্রপ্রদেশে যাচ্ছিল বিকাশ হালদার। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে তাঁরও। অন্ধ্রপ্রদেশে চাষের কাজ করতে যাচ্ছিলেন তিনিও। তাঁর আত্মীয় ধনঞ্জয় হালদারেরও দাবি, কাজ নেই বলেই যেতে হয়েছিল। 


বিরোধীদের নিশানায়:
বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী থেকে সিপিএম-কংগ্রেস। সকলেই একই সুরে আক্রমণ করেছে রাজ্যের শাসক দলকে। তৃণমূলের নীতির জন্য চাকরি, কাজ নেই বলে অভিযোগ বিরোধীদের। 


পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীর: 
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'এই যে বলছে না পরিয়ায়ী শ্রমিক, পরিযায়ী শ্রমিক। আরে তাঁদেরও অর্থনীতিতে ভূমিকা রয়েছে। তারাও রেভিনিউ আনছে। বিহার থেকে ওড়িশা যায়, ওড়িশা থেকে রাজস্থানে যায়, রাজস্থান থেকে বাংলায় আসে। আমরা সবাই ভারতীয়। এমনকি কেউ কুয়ালালামপুর যায়, কেউ দুবাই যায়, কেউ আমেরিকা যায়। অনেক আছে। পরিযায়ী শ্রমিক বলে তাঁদের অসম্মান করা উচিত নয়। তাঁরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। তাঁরা দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন করছে। কারণ তারা রাজ্যে টাকা পাঠাচ্ছে।'


এদিন বাসন্তীতে বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় স্বজনহারাদের পাশে দাঁড়ান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাঁদের আর্থিক সাহায্য়ের ঘোষণাও করেন।


আরও পড়ুন, জানেন কি রান্নাঘরের এই মশলা জীবন বদলে দিতে পারে ?