কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেফতার (SSC Recruitment Scam) রাজ্যের একদা ‘হেভিওয়েট’ মন্ত্রী। তাঁর বান্ধবীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে কোটি কোটি টাকা, গয়না। সেই নিয়ে যখন উত্তাল গোটা রাজ্য, সেই সময় আচমকাই খবরের শিরোনামে উঠে আসা। যে সে ঘটনা নয়, হাসপাতালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee) লক্ষ্য করে সরাসরি জুতো ছোড়ার ব্যাপার (Shoe Hurled at Partha Chatterjee)। তার পর থেকেই আমতলার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাপোষা গৃহবধূ শুভ্রা ঘোড়ুইকে (Shubhra Ghorui) নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। কেউ তাঁকে সমর্থন করছেন, কেউ আবার আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে জুতো ছোড়ার বিপক্ষে। কিন্তু অখ্যাত থেকে রাতারাতি খবরে চলে আসা শুভ্রা কী বলছেন, কেন এই কাণ্ড ঘটালেন তিনি, এবিপি আনন্দের ক্যামেরার সামনে আবেগ উগরে দিলেন শুভ্রা। 


কেন জুতো ছুড়েছিলেন পার্থকে, জানালেন শুভ্রা


মঙ্গলবার জোকার ইএসআই হাসপাতালে পার্থকে দেখে জুতো ছুড়ে দিয়েছিলেন শুভ্রা। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই জানিয়ে দিয়েছিলেন, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পার্থর গায়ে জুতো লাগলে বেশি খুশি হতেন তিনি। এসি গাড়িতে চাপিয়ে, হুইল চেয়ারে বসিয়ে না ঘুরিয়ে, গলায় দড়িয় পরানো উচিত ছিল পার্থর। হাসপাতাল থেকে খালিপায়েই আমতলার বাড়িতে ফিরেছিলেন শুভ্রা। চটিজোড়া ফেলে এলেন কেন জানতে চাইলে সাফ জানিয়েছিলেন, পার্থকে ছোড়া জুতো পায়ে গলাতে পারবেন না তিনি। মঙ্গলবার এই জবাব দেওয়ার সময় অনুশোচনার সুর একেবারেই ছিল না তাঁর গলায়। 


কিন্তু বুধবার এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন শুভ্রা। পার্থকে লক্ষ্য করে জুতো কেন ছুড়লে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘চতুর্দিকে দেখছি টাকার এত অপচয়।কোটি কোটি টাকা ফ্ল্যাট কিনে রাখা হচ্ছে। সবরকম উত্তেজনা থেকে করে ফেলেছি আমি। সাধারণ নাগরিক হিসেবে উত্তেজনাবশত করে ফেলেছি। সামনাসামনি হওয়াতেই হয়ে গিয়েছে। উনি সামেন না এলে হয়ত হতো না।’’


জোকার ইএসআই হাসপাতালে এক আত্মীয়ের চিকিৎসার জন্যই গিয়েছিলেন শুভ্রা। কিন্তু হঠাৎ জুতো ছোড়ার চিন্তা উদয় হল কী ভাবে? বলতে গিয়ে কার্যতই গলা ধরে আসে শুভ্রার। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে যাওয়ার সময় বাসে একজন ভিখারি উঠেছিলেন। আমার কাছে ১০ টাকাও ছিল না যে বিস্কুট কিনে খাওয়ার জন্য দিই। কোনওরকমে দু’টো টাকা হাতে দিই। আজকাল দু’টাকায় কিছু হয় বলুন!’’ 


আরও পড়ুন: Firhad Hakim: ‘হম রহে, ইয়া না রহে’, রদবদলের আগেই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, দায়িত্ব কমছে জানতেন ফিরহাদ!


অত্যন্ত সাধারণ, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ শুভ্রা। স্বামী-স্ত্রী-দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার। অভাব আর দুশ্চিন্তা নিত্যসঙ্গী। সংসার চালাতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন। তার উপর এক মেয়ে আবার বিএসএসসি নার্সিং করতে ইচ্ছুক। মেয়ে পড়াশোনায় আগ্রহী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর জন্য টাকার সংস্থান করে উঠতে পারছেন না শুভ্রা এবং তাঁর স্বামী, পেশায় প্লাইউড কারখানার কর্মী সমীর ঘোড়ুই। 


তবে স্ত্রীর আচরণ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে তাই সাবধানী সুর শোনা যায় সমীরের গলায়।  তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে নার্সিং বিএসএসসি করেত চায়। টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছি। সেই নিয়ে দুশ্চিন্তা করে। টাকা কোথায় থেকে আসবে, এই ভেবে রাতে ঘুমোতে পারে না। এত পড়াশোনা করেও কিছু হবে না, এই ভাবনা তাড়িয়ে বেড়ায়। তার উপর চোখের সামনে এসব দেখছে। উনিও সামনাসামনি পড়ে গিয়েছেন। চেপে রাখতে পারেনি। জুতো ছুড়ে ফেলেছে। শরীর খারাপ সারাদিন। মাথা গরম হয়ে গিয়েছে হয়ত।’’ 


শুভ্রার আচরণ নিয়ে গত দু’দিন ধরে কম কাটাছেঁড়া হয়নি। তিনি রাজনীতি করেন না। শাসক, বিরোধী কোনও দলের সঙ্গে সংযোগ নেই। সাধারণ নাগরিক হিসেবেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে ফেলেছেন বলে মানছেন অনেকে। তবে, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হওয়া আর দোষী সাব্যস্ত হওয়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক। তাই শুভ্রার আচরণ নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সাফ বক্তব্য, ‘‘দল ব্যবস্থা নিয়েছে। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। তদন্ত চলছে। বিচার হবে। জুতো ছোড়া বিচারের মধ্যে পড়লে, আজ যাঁরা এই আচরণ সমর্থন করছেন, আগামী দিনে তাঁদের কারও সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটলে, তখন প্রতিক্রিয়া একই থাকবে তো!’’ 


শুভ্রার আচরণ নিয়ে রাজনৈতিক তরজা অব্যাহত


রাজনৈতিক তরজার সঙ্গে যদিও নিজেকে জড়াতে চান না শুভ্রা। সাধারণ নাগরিক হিসেবে, আবেগের বশেই এমনটা ঘটিয়ে ফেলেছেন বলে দাবি তাঁর। কিন্তু ফের যদি পার্থ তাঁর সামনে পড়ে যান, তখনও কি একই আচরণ করবেন তিনি? প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান শুভ্রা। উঠে যান ক্যামেরার সামনে থেকে।