ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: সিকিমের বিপর্যয়ের ( Sikkim Flash Flood )  ধাক্কায় এখনও লন্ডভন্ড কালিম্পঙের ( Kalimpong ) তিস্তাবাজার। রবিবার সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন রাজ্য়পাল সি ভি আনন্দ বোস ( C V Ananda Bose ) । সিকিমের চুংথাং, লাচুং, লাচেনের মতো জায়গাগুলিতে এখনও আটকে রয়েছেন দেড়হাজার পর্যটক। ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ৪ দিন পরেও সিকিম ( Sikkim Disaster ) যেন মৃত্যুপুরী। একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে দেহ। চলে গেলে বহু সেনা জওয়ানের প্রাণ। বাড়ছে মৃতের সংখ্য়া।  এরই মধ্যে গ্রামে ফিরল সিকিমের বন্যায় প্রাণ হারোনো জওয়ানের মৃতদেহ। 


ফেরা হল না ...


জলপাইগুড়ির বিন্নাগুড়িতে কর্মরত ছিলেন বীরভূমের  ময়ূরেশ্বর নান্দুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা গোপাল মাড্ডি। কয়েক দিন ধরে দায়িত্বপালন করছিলেন সিকিমের হরভজন সিংহ মন্দিরে। মঙ্গলবার ডিউটি সেরে বিন্নাগুড়ি ফেরার পথে দুর্যোগের কবলে পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর। এরপর সেই দুঃসংবাদ এসে পৌঁছয় গোপালের বাড়ি। তাঁর এই আকস্মিক প্রয়াণে শুধু গ্রামে নয়, শোক নেমে আসে গোটা গ্রামে। গোপালের দেহে মালা দিতে গিয়ে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন স্ত্রী মাম্পি। পারলৌকিক কাজের পরে গ্রামেই গোপালকে 'গার্ড অফ অনার' দেওয়া হয়। 


গত মঙ্গলবার সিকিমে হরভজন সিং বাবা ধাম থেকে ডিউটি করে বিন্নাগুড়ি তে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় যান।  গত  জওয়ানের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। রবিবার দুপুরে তার মৃত গ্রামে পৌছায়। গান স্যালুট দিয়ে তার শেষকৃত কাজ সসম্পূর্ণ  করা হয়। কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর পরিবার । উপস্থিত ছিলন বীরভূম জেলার  সভাধিপতি কাজল শেখ। 


রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ গ্রামে পৌঁছায় গোপালের দেহ। ময়ূরেশ্বরের নান্দুলিয়া গ্রামে শোকে কারও মুখে তখন কথা নেই। ভাষা হারিয়েছে পরিবার। কালীপুজোয়  বাড়ি ফেরার কথা বলেছিলেন তিনি, কিন্তু ফিরল তাঁর দেহ।  ‘গোপাল মাড্ডি অমর রহে’ স্লোগানে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর নামে জয়ধ্বনিতে,  গ্রামের ছেলেকে শেষ বিদায় জানাল গ্রামবাসী। 


ফ্ল্যাশ-ফ্লাড বিপর্যয়ের পর এখনও কাদামাটির ফাঁসে হাঁসফাঁস করছে উত্তর সিকিমের বিস্তীর্ণ অংশ। এরই মধ্যে পায়ের নখ দিয়ে নরম মাটি আঁচড়ে তারই অনুসন্ধান চালাচ্ছে সেনাবাহিনীর স্নিফার ডগ। প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমের এই বিপর্যয় তিস্তার স্রোত বেয়ে নেমে এসে তছনছ করে দিয়েছে উত্তরবঙ্গের কালিম্পংকেও। খাবার, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা ছাড়াও আটকে থাকা পর্যটকদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের যোগাযোগ করানোর চেষ্টা করছেন সেনা কর্মীরা।


আরও পড়ুন :


 সিকিমে নিখোঁজ কোচবিহারের রাজমিস্ত্রি, হানিমুনে গিয়ে আটকে বাগদার দম্পতি