উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায়, পার্থপ্রতিম ঘোষ ও ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা : কখনও বিডিও অফিসে ঢুকে বিরোধী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র কেড়ে নেওয়া, কখনও বাস-অ্য়াম্বুল্যান্স দাঁড় করিয়ে তল্লাশি। দিনভর ভাঙড়ে দাপিয়ে বেড়াল শাসক দল, আর তা দাঁড়িয়ে দেখল পুলিশ। দুষ্কৃতী নয়, বরং তারা বেশি ব্যস্ত ছিল সংবাদমাধ্য়মকে আটকাতে।


তৃণমূলের দুর্গ ! ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস। শাসকের সন্ত্রাসে সন্ত্রস্ত গোটা ভাঙড় ! আর সেখানে, পুলিশ কার্যত চোখে ঠুলি পরে ! কানে তুলো গুঁজে। গতকাল সকাল থেকেই ভাঙড় জুড়ে শুরু হয় দুষ্কৃতীদের সন্ত্রাস। মুহুর্মুহু পড়তে থাকে বোমা। সেই সঙ্গে শোনা যায় গুলির শব্দ। আধ ঘণ্টায় ১০০ বোমা পড়েছে। কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, কারও পাইপ। একটা সময় সংবাদ মাধ্য়মকে লক্ষ্য় করে শুরু হয় বোমাবাজি। কিন্তু এসব কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না পুলিশ কর্মীরা। এনিয়ে আমাদের প্রতিনিধির তরফে পুলিশকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনারা যাচ্ছেন না কেন ? দেখতে পাচ্ছেন না ? উত্তরে এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, না। দেখতে পাচ্ছিনা। আপনারাও পাচ্ছেন না। মিথ্য়ে বলছেন কেন ?

গলির মুখ থেকে ধেয়ে আসে একের পর এক বোমা, গুলি। আক্রমণের উদ্দেশে বাঁশ, লাঠি হাতে ছুটে আসছে দুর্বৃত্তরা। কিন্তু দুষ্কৃতীদের আটকাতে নয়, পুলিশের তখন লক্ষ্য় একটাই, সংবাদ মাধ্য়মকে থামানো। যাতে ভাঙড়ের নির্লজ্জ এই সন্ত্রাসের ছবি সম্প্রচারিত হতে না পারে। এপ্রসঙ্গে ভাঙড়ের ISF বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি বললেন, 'টোটালি নীল পুলিশের ভূমিকা। পুলিশ নিয়ে গেছিল। পুলিশের সামনে থেকে কাগজ কেড়ে নিয়েছে। পুলিশমন্ত্রীকে পদত্য়াগ করতে হবে।'

একই ছবি ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজারেও। সেখানেও মুহুর্মুহু চলে গুলি, পড়ে বোমা। আগুন ধরানো হয় একের পর এক গাড়িতে।
হেলমেট পরে, হাতে লাঠি নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় শাসকের গুণ্ডা বাহিনী।

গত ২ দিনের মতোই, বৃহস্পতিবারও ভা়ঙড় জুড়ে চলে ১৪৪ ধারার প্রহসন ! সকাল ৯টা থেকেই ভাঙড় ২ নম্বর বিডিও অফিস কার্যত দখল নেয় তৃণমূল। গাড়িতে, ম্য়াটাডরে করে ঝাঁকে ঝাঁকে এসে হাজির হয় শাসক বাহিনী। বিডিও অফিসের ভিতরে তৃণমূল। আর বাইরে বিশ্রামে পুলিশ। এরইমধ্য়ে দাপটের সঙ্গে গাড়িতে চেপে, বিডিও অফিসে ঢোকেন তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। তারপরই, বিডিও অফিসের গেট আটকে দেয় তৃণমূল। ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় সংবাদমাধ্য়মকে।

বিডিও অফিসের সামনে মোতায়েন প্রচুর পুলিশ, ব়্যাফ। অথচ, তাঁদের সামনেই বিরোধীদের মনোনয়ন কেন্দ্রের ধারে কাছে ঢুকতে দেয়নি তৃণমূল। ভাঙড় ১ নম্বর ব্লকে, এক আইএসএফ কর্মী কোনওক্রমে মনোনয়ন কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকতে পারেন। কিন্তু সেখানে তাঁর হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় ফর্ম। নথিপত্র। তৃণমূলের গুণ্ডাগিরি এখানেই শেষ নয়। বাসে বা গাড়িতে চেপে যাতে বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়ন কেন্দ্রে না আসতে পারে তাই, বাসন্তী হাইওয়ের নলমুড়ি হাসপাতাল মোড়ে সকাল থেকেই জড়ো হয় তৃণমূল কর্মীরা। বাস থেকে শুরু করে গাড়ি... সবেতে চলে তল্লাশি। বাদ যায় না অ্য়াম্বুল্য়ান্স, বিয়ে বাড়ির গাড়িও।

দুষ্কৃতীদের কারও মাথায় হেলমেট, কারও আবার মুখোশ, কেউ প্রকাশ্য়ে লাঠি-বাঁশ হাতে ঘুরছে, কারও আবার সেসব পিঠে লুকোনো।
ঝড়ল রক্ত। মৃত্য়ু হল আইএসএফ প্রার্থীর। আক্রান্ত সংবাদ মাধ্য়ম। আতঙ্কে ভাঙড়বাসী। আর কতটা সন্ত্রাসের পর, চোখ খুলবে পুলিশের?