হিন্দোল দে, কুলপি : এবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপিতে (Kulpi) বোমা ফেটে (Bomb Blast) জখম হল দুই কিশোর। কালভার্টের তলায় রাখা ছিল বোমা। অজান্তে তা তুলে নিয়ে ছুড়তেই বিস্ফোরণ ঘটে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। এই ঘটনায় মোট ৬জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এনিয়ে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা।
৩ দিনে চতুর্থ ঘটনা !
সাঁইথিয়া, কেশপুর, মিনাখাঁর পর এবার কুলপি। ৩ দিনে চতুর্থ ঘটনা ! বোমা ফেটে অঙ্গহানি এবং মৃত্যু চলছেই ! রেহাই পাচ্ছে না ছোটরাও ! বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয় বোমা ফেটে প্রাণ গেছে এক ন’বছরের বালিকার। এবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপিতে বোমা ফেটে জখম হল দুই কিশোর।
বুধবার দুপুরে হঠাৎই বোমার শব্দে কেঁপে ওঠে কুলপি থানা এলাকার ছামনাবনি গ্রাম। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই কালভার্টের উপরে বসে ছিল কয়েকজন কিশোর। কালভার্টের নীচে প্লাস্টিকে মোড়া কিছু একটা জিনিস দেখতে পায় তারা। কৌতুহলের বশে একজন সেটি তুলে নিয়ে, কালভার্টের দেওয়ালে ছুড়ে মারে। তখনই প্রচণ্ড শব্দে ফেটে যায় সেই জিনিসটি। গুরুতর জখম হয় দুই কিশোর।
কালভার্টের দেওয়ালে এখনও রয়ে গেছে, বোমা ফাটার চিহ্ন ! পুলিশ সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, কৌটো বোমা ফেটে জখম হয়েছে দুই কিশোর। তাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে স্পিলন্টারের ক্ষত।
আর কয়েক মাস পর পঞ্চায়েত ভোট। কিন্তু, তার আগেই যেভাবে একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনা সামনে আসছে, তাতে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, ভোটের সময় কী হবে ! সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, খুবই বিপজ্জনক হচ্ছে। গতকাল মিনাখায় শিশুমৃত্যু হল, আগের দিন কেশপুর, সাঁইথিয়া, বাসন্তী, আজ সকালে কুলপিতে বিস্ফোরণ এবং দু’জন বাচ্চা আহত। দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি পিছনে পুলিশ আছে, দুষ্কৃতীরা মনে করছে পিছনে পুলিশ, প্রশাসন আছে, নবান্ন আছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন না উদ্ধার করব, উদ্ধার হচ্ছে কোথায় ? উল্টে তো বাড়ছে।
যদিও তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, সন্ত্রাসকে হাতিয়ার করে তৃণমূলকে ভোট জিততে হয় না। মানুষের হয়ে সারা বছর কাজ করে, তাই আগের থেকে বেশি ভোটে জয়ী হয়। বিরোধীদের দেখে শেখা উচিত, এই সরকার কত তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ করে। প্রশাসন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পিছপা হয় না। যা বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে দেখতে পাই না।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে বাবুসোনা নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন অসামাজিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে, আরও ৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ৫টি তাজা বোমা, কার্তুজ-সহ একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে ২৫ অক্টোবর, কাঁকিনাড়ায় রেললাইনের ধারে বল ভেবে বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে মৃত্যু হয় ৭ বছরের এক শিশুর। বিস্ফোরণে হাত উড়ে যায় ১০ বছরের এক বালকের। ২৮ অক্টোবর, সোনারপুরের খেয়াদা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দুষ্কৃতীদের মজুত বোমার হদিশ পেয়ে যাওয়ায়, ৫ নাবালককে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। গত সোমবার, সাঁইথিয়ায় গ্রাম দখল ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠী-বিবাদের জেরে বোমাবাজির ঘটনায় পা উড়ে যায় এক তৃণমূল কর্মীর। সেখানেও গুরুতর জখম হয় ১৪ বছরের কিশোর। আর বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয় মামা বাড়িতেই বোমা ফেটে মৃত্যু হয় নাবালিকার। আরও কতবার এইভাবে সন্ত্রাসের বলি হবে শৈশব ? প্রশ্ন উঠছে এই ঘটনা ঘিরে।