পার্থপ্রতিম ঘোষ, ফলতা: ২ কোটি টাকা চেয়ে তোলাবাজির (extortion) অভিযোগ, এফআইআর। অভিযোগের তীর বিডিও (BDO) ও আইসির (IC) বিরুদ্ধে। ফলতার নার্সিংহোমের কর্ণধারের বিস্ফোরক অভিযোগ। ঘটনায় শোরগোল।


ঠিক কী ঘটেছে?


নার্সিংহোম মালিক জাহির ইসলাম শেখের কথায়, '১ বছর আগে নার্সিং ইন্সটিটিউট তৈরির কাজ শুরু হয়। তখন থেকেই অত্যাচার শুরু। নার্সিং কলেজে ভর্তির ৩ ভাগের ১ ভাগের টাকা ওদের দিয়ে দেওয়ার দাবি করে।'


২ কোটি টাকা তোলা চাওয়ার অভিযোগ। নার্সিংহোম মালিককে চাপ দিয়ে টাকা আদায়ের ‘চেষ্টা’। কাঠগড়ায় জাহাঙ্গির খান-সহ কয়েকজন তৃণমূল নেতা। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হল, হুমকির অভিযোগ উঠেছে খোদ BDO এবং IC-র বিরুদ্ধে। বিস্ফোরক অভিযোগ করছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার একটি নার্সিংহোমের মালিক জাহির ইসলাম শেখ।


আতঙ্কে নার্সিংহোম মালিক


আতঙ্কে গৃহবন্দি অবস্থা রয়েছেন জাহির ইসলাম শেখ। 'দ্য সরারহাট নার্সিংহোম'-এর মালিকের দাবি, গত বছর একটি নার্সিং ইন্সটিটিউট তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। তখন থেকে তোলাবাজি শুরু হয়। ফলতা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি জাহাঙ্গির খানের নির্দেশে ২ কোটি টাকা দাবি করা হয়। টাকা চেয়ে চাপ দেন বেলসিংহ ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান কাকলি মালিক ও উপপ্রধান সাইদুল খানও।


জাহির ইসলাম শেখের কথায়, 'নার্সিংয়ে ভর্তি হলে তিনভাগের এক ভাগ টাকা দিতে হবে বলে। বড়বাবু, মেজবাবু, ছোটবাবু সব আসত তোলা তুলতে। টাকা অল্প অল্প করে দিই। এখন এমন টাকা চাইছে যা দেওয়া সম্ভব না। জাহাঙ্গিরের নেতৃত্বে তার ভায়রা ভাইরা প্রথমে ৩ কোটি চায়, পরে তা ২ কোটিতে দাঁড়ায়, বেআইনি ভাবে নার্সিংহোম বন্ধ করায়।'


অন্যদিকে, ফলতা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল নেতা ও সভাপতি জাহাঙ্গির খান বলছেন, 'বেআইনি কাজ করছে ও। দেবত্তোর সম্পত্তিতে বিল্ডিং করছে। তা থেকে বাঁচতে এসব করছে, মিথ্যে বলছে। আমার দোষ প্রমাণ করতে পারলে মৃত্যুবরণ করব।'


তবে এখানেই শেষ নয়...


সমস্যা এখানেই শেষ নয়। খোদ ফলতার বিডিও সন্দীপ ঘোষ ও আইসি অভিজিৎ হাইতের বিরুদ্ধেও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন নার্সিংহোম মালিক। তাঁর দাবি, গত ২৩ মার্চ তাঁর নার্সিংহোমে এসে হুমকি দেন এই দু’জনই সরকারি আধিকারিক। 


 






জাহির ইসলাম শেখ দাবি করেন, '২৩ মার্চ বিডিও নার্সিংহোম ভিজিট করতে আসেন সকলে মিলে। বিডিও টাকা দিয়ে মিটমাটের কথা বলেন। আইসি টাকা দেওয়ার কথা বলেন। তোলাবাজদের নিজের গাড়িতে তোলেন বিডিও। এরপর আইসি বলে মিথ্যে কেসে ফাঁসিয়ে দেব। নার্সিংহোমে বন্দি আমি, ভয়ে আছি।'


আরও পড়ুন: Belpahari: মাওবাদী হামলার আশঙ্কার মধ্যেই বেলপাহাড়ির ভুলাভেদার জঙ্গলে মৃতদেহ উদ্ধার


ফলতার বিডিও সন্দীপ ঘোষ কী বলছেন? তাঁর কথায়, 'একটা ডাইরেকশন ছিল। জেলার উচ্চ পর্যায়ের মিটিং হয়েছে, হেলথের মিটিং হয়েছিল। ডেপুটি সিএমওএইচ চিঠি দিয়ে এনকোয়ারি করতে বলে। তার ভিত্তিতে যাওয়া। টাকার বিষয়ে মিথ্যে অভিযোগ আনা হয়েছে। গাড়িতে যাঁরা ছিলেন তাঁরা পোর্ট ফোলিও হোল্ডার।'


এই ঘটনার পর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন নার্সিংহোম মালিক। অভিযোগ শুনে, ১৯ এপ্রিল ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একদিনের মধ্যে ফলতা থানাকে অভিযোগ নিয়ে এফআইআরও রুজু করতে বলে আদালত।


এরপর ২০ তারিখ ফলতা থানায় বিডিও, আইসি, তৃণমূলের প্রধান ও উপপ্রধান সহ মোট ৯ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন নার্সিংহোম মালিক। ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার সুপার বলেন, 'অভোযোগ পেয়েছি। যথোপযুক্ত ধারায় মামলা করা হয়েছে। ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসারকে দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।'