হিন্দোল দে ও গৌতম মণ্ডল, কাকদ্বীপ : মোটা টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসা লোকেদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে ভোটার কার্ড ! বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে রাজ্য রাজনীতি যখন উত্তপ্ত, তখন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ থেকে সামনে এসেছে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ ! আর সেই অভিযোগে জড়িয়েছে তৃণমূলের নাম। যদিও, তৃণমূল নেতারা সেই অভিযোগ খারিজের চেষ্টা করেছেন।

বাংলাদেশি ? ভারতের নাগরিকত্ব চাই ? কুছ পরোয়া নেহি ! ফেলো কড়ি, পাও ভোটার কার্ড ! ব্যাপারটা যেন এতটাই জলভাত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ থেকে সামনে আসছে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ। আরও মারাত্মক বিষয় হল, সেই অভিযোগে জড়িয়েছে তৃণমূলের নাম। কাকদ্বীপের ভোটার তালিকায় নাম থাকা সুজন সরকার বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। তাঁর সরাসরি অভিযোগ, তৃণমূল নেতাকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে নাম তুলিয়েছেন ভোটার তালিকায়। তিনি বলেন, "ওই ১০ হাজার টাকার মতো দিতে হয়েছে। টাকাটা পার্টির লোককে দিয়েছি। তৃণমূলের লোককে দিয়েছি।"

একই দাবি কাকদ্বীপের রামকৃষ্ণ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা, বাংলাদেশ থেকে আসা অর্জুন দাসেরও। তিনি বলেন, "আমাকে বলেছে তুমি টাকা দাও আমি ভোটার করে দেব। আমি বললাম, তুই আমার এই এলাকার লোক, যাই হোক করে দিলে আমি একটু বাঁচি, যা হোক কিছু রিলিফ টিলিফ পাব ভোটার কার্ড থাকলে।" তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কে বলল আপনাকে এটা? উত্তরে অর্জুন দাস জানান, কাশী বিশ্বাস। তৃণমূলের নেতা।

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করতে গিয়ে, তৃণমূলকর্মী কাশীনাথ বিশ্বাসের মুখে উঠে এসেছে, সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলার TMCP সভাপতি দেবাশিস দাসের নাম। তিনি বলেন,"আমার নাম বললে কী হবে ? আমি তো নেই এর মধ্যে। আমি জানি না। আমার নাম করে কোনও লোক যদি কোথাও গিয়ে টাকা দেয়, তার জন্য কি দোষটা আমার ? আমাকে দেননি। আমার হাতে টাকা দেননি। আমার নেতা এখানে হচ্ছে দেবাশিস দাস।" টিএমসিপির সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশিস দাস বলেন, "অর্জুন দাস বলে তো কাউকে চিনি না। আর কাশী বলে একজন আমাদের তৃণমূলের কর্মী আছেন। এবার অর্জুন বলে যে নাম তিনি সঠিক তথ্য বলছেন কি না সেটাও যাচাই করতে হবে। ১২ বছর আগে রাজনীতির কোন জায়গায় ছিলাম আমি সেটাই তো বুঝতে পারছি না।"

এর আগে বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ নিউটন দাসেরও নাম পাওয়া গেছিল ভারতের ভোটার তালিকায়। তাঁর সঙ্গেও ছবিতে দেখা গেছিল এই দেবাশিস দাসকে। 

এ প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের খোঁচা, "একটা রিজিওনাল পার্টি। আঞ্চলিক দল। যারা বেশ কিছুদিন আগে রাষ্ট্রীয় দলের মর্যাদা হারিয়েছে। তারা এমন কর্মী তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে, যারা ইন্টারন্যাশনাল কর্মী। আন্তর্জাতিক কর্মী। যাঁরা পশ্চিমবঙ্গেও তৃণমূল কংগ্রেস করেন, আবার বাংলাদেশে গিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন।"

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ইস্যুতে বিতর্কের আবহে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কাকদ্বীপের ছবি।