গৌতম মণ্ডল, কলকাতা : মাটির দেওয়াল ধসে মৃত্যু হল মা ও দুই কিশোরী কন্যার। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারের আঁচনা গ্রাম পঞ্চায়েতে। মৃতদের নাম- বৃহস্পতি কর্মকার ( ৪৫) ,  শীলা  কর্মকার (১৫) ও প্রিয়া কর্মকার ( ১০)। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গত ১৩ অগাস্ট জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জে দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছিল ২ শিশুর।

বিস্তারিত...

মন্দিরবাজারের আঁচনা গ্রাম পঞ্চায়েতের রামনাথপুর কর্মকারপাড়া। এখানে ওই বিধবা মহিলা বৃহস্পতি কর্মকার তাঁর দুই কিশোরী কন্যাকে নিয়ে থাকতেন। তাঁর স্বামী ৬-৭ বছর আগে মারা গেছেন। মাটির বাড়ির অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। দরজা প্রায় ছিল না বললেই চলে। এরকম একটা বাড়িতে তাঁরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছিলেন। পরিচারিকার কাজ করে কোনও রকমে দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতেন বৃহস্পতি। এর পাশাপাশি সামান্য কিছু হাতের কাজ করতেন। দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবারটিকে আবাস যোজনার তালিকাভুক্ত করার দাবি ছিল। কিন্তু, প্রথমে তা করা হয়নি বলে অভিযোগ। পরে অবশ্য বাংলা আবাস যোজনায় তাঁদের তালিকাভুক্ত করা হয়। তার প্রথম কিস্তির টাকাও এসে গিয়েছিল। সেই টাকায় ইটের দেওয়াল তুলেছিলেন মহিলা। মাটির বাড়ির পাশেই এক কামরার ঘর তৈরি হচ্ছিল। এরপর গত ৩০ অগাস্ট দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আসে। কিন্তু, সেই টাকা এখনও ব্যাঙ্ক থেকে তোলেননি বৃহস্পতি। তার আগেই শেষ হয়ে গেল ৩ প্রাণ।

তাঁদের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ১০-১২ বছর ধরে ওই বাড়িতে বসবাস করছিলেন তাঁরা। গতকাল রাত ৯টা-৯টা পর্যন্ত তাঁরা (মহিলা ও তাঁর দুই কন্যা) ঠিকই ছিলেন। প্রতিবেশীর ঘর থেকে টিভি দেখে ফেরেন বৃহস্পতি কর্মকার। সকালে প্রতিবেশীরা গিয়ে দেখেন, তাঁরা তিনজন দেওয়ালে চাপা পড়ে রয়েছেন। এরপর শাবল ও কোদাল নিয়ে এসে মাটি পরিষ্কার করে তাঁদের তিনজনের দেহ উদ্ধার করা হয়। ভাঙা ঘরের মধ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় ভাত। তাহলে কি রাতের খাবার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে গেছে ?   

স্থানীয়দের বক্তব্য, এখনও অনেক পরিবার এরকম মাটির বাড়িতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন। রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তের মতোই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেও টানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে। ফলে, এই সমস্ত মাটির বাড়ির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। প্রাণ হাতে নিয়েই বসবাস করছেন অনেক মানুষ। যে কোনও বিপদ ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাঁদেরও।