গৌতম মণ্ডল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় দানা। ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। আজ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সুন্দরবন উপকূলে ঝড়ের দাপট বেশি। কাল পর্যন্ত জেলায় সমস্ত জল পরিবহণ পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। গতকাল রাত থেকে প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে ফ্লাড সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। কাকদ্বীপের বাসিন্দা দশমী দাস বলছেন, ''ভয়ে আমরা আতঙ্কে আমরা চলে যাচ্ছি। বাধ্য হয়ে আমাদের ঘর-বাড়ি ছেলেপুলে নিয়ে আমরা জীবনের জন্য আমরা চলে যাচ্ছি। কী করব এখন।''
সাগর, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, গোসাবা ও কাকদ্বীপ থেকে সবথেকে বেশি মানুষকে সরানো হয়েছে। মাইকে সবসময়ে প্রচার করা হচ্ছে, ''যে সমস্ত লোকজনেরা এই ঘরের মধ্যে আছেন, অনুগ্রহ করে আপনারা বেরিয়ে আসুন। আমরা আপনাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাব। যে কোনও মুহূর্তে দানা নামক ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে পারে...'' এছাড়া, সুন্দরবনের বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলিতে বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে। উপকূলে ৩৫টি CC ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে NDRF-এর ৩টি, SDRF-এর ২টি দলকে এবং প্রশিক্ষিত ডুবুরিদের। গাছ ভেঙে পড়লে পরিষ্কার করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৪৭০টি দল। জেলা, মহকুমা ও ব্লকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলার সমস্ত পর্যটন কেন্দ্র ও সুন্দরবন ভ্রমণ আজ ও কাল বন্ধ রাখা হয়েছে।
গ্রামের একদিকে বয়ে গেছে মুড়িগঙ্গা নদী, আরেকদিকে হাতানিয়া দোয়ানিয়া, কাছেই বঙ্গোপসাগরের সংযোগস্থল। গ্রামবাসীদের দাবি, নান্দাভাঙা গ্রামে বছরে ৫ বার ভাঙে নদী বাঁধ। প্রতিবারই কোনওমতে সারানো হয়। বিধায়ক-সাংসদদের বারবার বলেও কংক্রিটের বাঁধ হয়নি বলে গ্রামবাসীদের দাবি। এদিনও তড়িঘড়ি বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগে এভাবে বাঁধ মেরামতি করে লাভ কী? প্রশ্ন গ্রামবাসীদের।
লড়াই ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে। তাই বেঁধে রাখা সাগর পাড়ি দেওয়ার ট্রলার। বেঁধে রাখা হয়েছে একমাত্র সম্বল দোকানঘর। দড়ি দিয়ে ছাউনি বেঁধে রেখে ছেড়ে যেতে হচ্ছে ঘরবাড়ি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দেখা গেল এই ছবি। কখনও আয়লা, কখনও আমফান, কখনও ইয়াস আর এবার 'দানা'। একটা ক্ষত সেরে ওঠার আগেই তৈরি হয় আরও একটা ক্ষত। ঘরবাড়ি ছেড়ে পাড়ি দিতে হয় অজানার উদ্দেশে। এবার ঘরছাড়া করল 'দানা'।