শান্তনু নস্কর, বাসন্তী, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: সম্প্রতি জেলায় জেলায় আবাস যোজনা নিয়ে নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এবার একেবারে উল্টো ঘটনা দেখা গেল। সরকারি আবাস যোজনার তালিকায় নাম থাকায় নিজেই সেই নাম কেটে বাদ দিলেন পঞ্চায়েত প্রধান। বাসন্তী ব্লকের অন্তর্গত চুনাখালি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান দীপালি বৈরাগী সর্দার তালিকা থেকে তাঁর সেই নাম বাদ দেওয়ার জন্য বিডিওর কাছে আবেদনও জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই গ্রামসভায় রেজোলিউশান করে তা বিডিওকে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান। প্রধানের এই উদ্যোগে খুশি এলাকার সাধারণ মানুষ।


সমীক্ষার পরেও গোলমাল:
সরকারি আবাস যোজনার নামের তালিকা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৮ সালে গৃহহীনদের নিয়ে এই সার্ভে হয়। প্রাথমিক ভাবে সমীক্ষা করে সরকারি কর্মীরা যাঁরা বাড়ি পাওয়ার যোগ্য তাঁদের নাম নথিভুক্ত করেন। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী সম্প্রতি ওই তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সেই তালিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ওই তালিকায় এলাকার বহু পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, চাকরিজীবির নাম রয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে রাজ্য জুড়ে ব্যাপক তোলপাড়ও শুরু হয়েছে। বহু জায়গাতেই তালিকায় নাম থাকলেও যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে তাঁদের নাম সেই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আশাকর্মী ও অঙ্গনওয়ারী কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই তদন্ত শুরু করেছে। তবে চুনাখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তালিকায় নাম দেখেই নিজের উদ্যোগে তাঁর নাম সেই তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। প্রধানের এই সিধান্তে খুশি এলাকার সাধারণ মানুষ। 


কী কী সমস্যা:
সম্প্রতি এই পঞ্চায়েতের প্রকাশিত তালিকায় মোট ২৭২৭ জনের নাম রয়েছে। তালিকায় একদিকে যেমন নাম রয়েছে এলাকার তৃণমূল নেতা অমৃত সরকারের স্ত্রী ও মেয়ের। তেমনিই নাম রয়েছে আরও অনেক বাসিন্দাদের, যাঁদের আগে থেকেই পাকা বাড়ি রয়েছে। ইতিমধ্যেই সেই তালিকা পর্যালোচনা করে মোট ১৫৯৮টি বাড়ি তৈরির সংশোধনী তালিকা তৈরি হয়েছে। তবে প্রধানের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে তাঁর নাম এই আবাস যোজনার তালিকায় এল? এই প্রশ্নের জবাবে দীপালি বলেন, ''যখন এই বাড়ির সার্ভে হয়েছিল তখন আমি একজন সাধারণ সদস্য ছিলাম এবং আমার কাঁচা বাড়ি ছিল। যাঁরা সমীক্ষা করেছিলেন তাঁদের মনে হয়েছিল আমার ঘর প্রয়োজন, সেই কারণে নাম তালিকাভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু ইয়াসে বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর ধার দেনা করে বছর দুয়েক আগে বাড়ি তৈরি করেছি। বর্তমানে আমার সরকারি আবাস যোজনায় বাড়ি দরকার নেই, তাই তালিকা থেকে নিজের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন বিডিওকে জানিয়েছি।''


অন্যদিকে এলাকার দুঃস্থ, অসহায় মানুষের নাম আবাস যোজনার তালিকায় না থাকলেও অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি অমৃত সরকারের স্ত্রী ও মেয়ের নাম এই তালিকায় রয়েছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চয় হয়েছে।


আরও পড়ুন:  ডেঙ্গির মাঝেই বাড়ছে এনসেফ্যালাইটিস, কেন্দ্রীয় রিপোর্টে বাড়ছে উদ্বেগ