পার্থপ্রতিম ঘোষ, শান্তনু নস্কর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: এগিয়ে আসছে ২১ জুলাই, তৃণমূলের শহিদ স্মরণ দিবস (21 July)। তার আগে খুন হলেন দলের তিন নেতা। প্রথমে একে একে গুলি, তার পর নৃশংস ভাবে কোপানো হয় প্রতিটি দেহ। ক্যানিংয়ে (Canning Triple Murder) শাসকদলের নেতাদের উপর এই হামলায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কী কারণে খুন হতে হল ওই তিন নেতাকে, তার কারণ খুঁজতে যখন ব্যস্ত পুলিশ থেকে দল, সেই সময় বিস্ফোরক দাবি করলেন ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল (TMC) বিধায়ক সওকত মোল্লা (Saokat Molla)। বিজেপি-র মদতে গোটা ঘটনা সম্পাদিত হয়েছে বলে দাবি করলেন তিনি। 


নৃশংস হত্যাকাণ্ড ক্যানিংয়ে


ক্যানিংয়ে জনবহুল এলাকায়, মোটরবাইক থামিয়ে তিন তৃণমূল নেতাকে গুলি করে, গলা কেটে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য স্বপন মাঝি, গোপালপুর এলাকার তৃণমূলের বুথ সভাপতি ভূতনাথ প্রামাণিক এবং যুব তৃণমূলের বুথ সভাপতি ঝন্টু হালদারের। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ পিয়ারের পার্ক এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি তাজা বোমা এবং তিনটি গুলির খোল।


এ দিন বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা রাজ্যে। সেই আবহে গোটা ঘটনায় বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন সওকত। তিনি বলেন, "এই এলাকায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব নেই। সমাজ বিরোধীরা একত্রিত হয়েছে এবং সম্পূর্ণ ভাবে বিজেপি-র মদতে হয়েছে। স্বপন আমাদের একজন সক্রিয় পঞ্চায়েত সদস্য (Panchayat Election)। দু'জন বুথ সভাপতি। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন, খুন না করলে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে না। সেই কারণে পরিকল্পিত ভাবে খুন।"


আরও পড়ুন: South 24 Paraganas: তৃণমূল নেতা-সহ ৩ জনকে গুলি করে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ ক্যানিংয়ে


এ দিন ঘটনাস্থলে যান বারুইপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার পুষ্পা, আইজি প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ তন্ময় রায়চৌধুরী এবং এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সিদ্ধিনাথ গুপ্ত। রাজনৈতিক সংযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে, এখনও তেমন কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়ে দেন পুলিশ সুপার। তবে এই ঘটনা সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা এলাকায়। খুনের পিছনে ব্যক্তিগত আক্রোশের তত্ত্বও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকেই। 


স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর দেড়েক আগে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য স্বপন মাঝির ঘনিষ্ঠ বাদল নামে এক তৃণমূল কর্মীর উপর হামলা চালায় মাদক মামলায় জেলখাটা দুষ্কৃতী রফিকুল। অভিযোগ, রফিকুলের সন্দেহ ছিল, তাঁর জেলে যাওয়ার পিছনে হাত রয়েছে বাদলের। সেই কারণে জেল থেকে বেরিয়ে রফিকুল বাদলকে কুপিয়ে খুন করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে দাবি, সেই সময় বাদলকে বাঁচানোয় তৃণমূল সদস্য স্বপন মাঝি এবং তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে রফিকুলের শত্রুতা তৈরি হয়। তার জেরেই এই নৃশংস খুন কিনা, সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। 


২১ জুলাইয়ের আগে ৩ তৃণমূল নেতা খুন


এ দিনের এই ঘটনায়  নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন খোদ শাসকদলের বিধায়ক পরেশরাম দাস। খুনের নেপথ্যে বিজেপির হাত রয়েছে বলেও দাবি করেছেন ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক। "বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে বিজেপি," উদয়পুরকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে দাবি করেন কুণাল ঘোষও। যদিও শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই খুন হয়েছে বলে দাবি বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের।