সন্দীপ সরকার ও শান্তনু নস্কর: হাসপাতালে ন্য়ায্য়মূল্য়ের ওষুধের দোকান রয়েছে। আর তার পাশেই ফ্লেক্সে একেবারে ডিউটি রস্টারের মতো উল্লেখ, রাতে কবে কোন বেসরকারি ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। আর এই ফ্লেক্সের নীচেই রয়েছে খোদ ক্য়ানিং পশ্চিমের তৃণমূল বিধায়ক পরেশরাম দাসের নাম। এ ছবি ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের। (Canning Hospital)
ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ঢুকে সহকারী সুপারকে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে তোলপাড়। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে খোদ তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যর।
ওই পরিস্থিতিতে, চাঞ্চল্যকর ছবি ধরা পড়ল এই হাসপাতালেই। একেবারে মাদার অ্য়ান্ড চাইল্ড হাব ভবনের সামনে। হাসপাতালের ভিতরেই ন্য়ায্যমূলের দোকান আছে, যার ফ্লেক্সে লেখা- ৮৩% ছাড়ে মিলবে ওষুধ। আর তার পাশেই জ্বলজ্বল করছে আরও একটা তালিকা! তালিকার উপরে লেখা 'রাত্রিকালীন ওষুধ পরিষেবার তালিকা সূচি'। একেবারে ডিউটি রস্টারের মতো করে উল্লেখ করা, রাতে কবে কোন বেসরকারি ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। নীচে রয়েছে খোদ ক্য়ানিং পশ্চিমের তৃণমূল বিধায়ক পরেশরাম দাসের নাম। (South 24 Parganas News)
হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর আত্মীয় জানান, কিছু কিছু জিনিস কিনতে হয়। স্যালাইন, ইঞ্জেকশন কিনতে হয়েছে তাঁকে। যা যা লিখে দেওয়া হয়, বাইরে থেকে কিনতে হয় সেগুলি। সরকারি ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান নয়, যে তালিকা ঝুলছে, সেই অনুযায়ী প্রতিদিন একটি করে দোকান খোলা থাকে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে হয় তাঁদের।
ন্যায্যমূল্যের ওষুধ দোকানদাররা জানান, সদ্য দোকান খুলেছেন। ৮৩ ছাড়ে ওষুধ দিতে হচ্ছে। তাই অনেক ওষুধে বেশি ছাড় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে ন্যায্যমূল্যের দোকানে ওষুধ না পেলে, যে তালিকা রয়েছে, সেই অনুযায়ী অন্য দোকানে যাচ্ছেন রোগীরা। এক রোগীর আত্মীয় বলেন, "প্রথম যখন ভর্তি করেছি, ভর্তি নিয়ে নিয়ে নিয়েছে। সিজারের আগে যে ওষুধ লাগে, তা ভিতর থেকে স্লিপ করে দিয়েছে। রাতে বাইরে থেকে কিনে এনেছি।"
এ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের সদস্য স্বর্ণাক্ষ ঘোষ বলেন, "বিস্ময়কর ঘটনা। রোগী কল্যাণ সমিতিতে রোগীর প্রতিনিধি, বাড়ির লোকজন, ডাক্তারদের প্রতিনিধি এবং গ্রাউন্ড লেভেলের কর্মীরা যদি না থাকে এমন অনিয়ম এবং তার আড়ালে দুর্নীতি চলতেই থাকবে।" জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্সের সদস্য উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ওষুধের দোকানের এমন তালিকা যদি টাঙিয়ে যায়, তাহলে হাসপাতালে অস্ত্রোপচার না হলে, কোন নার্সিহোমে যাওয়া যেতে পারে, তার তালিকাও কি আগামী দিনে দেখতে পাব আমরা?"
হাসপাতালে রাতেও খোলা থাকে ন্য়ায্যমূল্য়ের ওষুধের দোকান। কিন্তু, রোগীর আত্মীয়দের দাবি, শুধু রাতে নয় দিনেও তাঁদের অনেক সময় ছুটতে হয় বেসরকারি ওষুধের দোকানে। স্যালাইন, অ্যান্টি বায়োটিক, কাশির ওষুধ, রক্তপাত বন্ধের ওষুধের যে প্রেসক্রিপশন দেয় সরকারি হাসপাতাল, তা নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়। শুধু রাতেই নয়, দিনের বেলাতেও ছবিটা একই। সরকারি হাসপাতালের মধ্য়ে বেসরকারি ওষুধের দোকানের এই ফলাও প্রচার, তার নীচে আবার তৃণমূল বিধায়কের নাম-ফোন নম্বর দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনেকেই।
এ নিয়ে ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানের মালিক বলেন, "দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা। কম বেশি সব ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। এখনও সব কিছু জোগাড় করতে পারিনি। কিছু ইঞ্জেকশনও এখনও বাকি রয়েছে। রোগীর পরিবারকে বাইরে যেতে হয় কারণ, কিছু ওষুধে ৮৩ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। অনেক ওষুধে ওই ছাড় দেওয়া যাচ্ছে না। সেগুলি বাইরে থেকে নিতে হচ্ছে। সারা রাত পাওয়া যায়।"
আর জি কর কাণ্ডের পর যে রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। ক্য়ানিং মহকুমা হাসপাতালের সুপারের দাবি, দু'-তিন মাস আগে রোগী কল্যাণ সমিতির মিটিং-এই বেসরকারি ওষুধের দোকানের এই তালিকা তৈরি করা হয়। ক্যানিং হাসপাতালের সুপার পার্থসারথি কয়াল বলেন, "রাতে দোকান খোলা থাকছে না বলে অভিযোগ আসে। যাতে ২৪ ঘন্টা ওষুধের দোকান খোলা রাখা যায়, তাই এমন সিদ্ধান্ত।" যদিও, এনিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূল বিধায়ক পরেশরাম দাস।