রঞ্জিত হালদার, সোনারপুর: এবছর পদ্মশ্রী সম্মানের জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনার সূচিশিল্পী প্রীতিকণা গোস্বামীর (Pritikona Goswami ) নাম ঘোষণা করেছে নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) সরকার। বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে, বিদেশেও সমাদৃত তাঁর সৃষ্টির সম্ভার। সোনারপুরের (Sonarpur) অতি সাধারণ বাড়ির সেলাই দিদিমণি বলছেন, বাংলার নকশীকাঁথাকে বিশ্বের দরবারে মেলে ধরাই তাঁর সাধনা।


সূচিশিল্পী প্রীতিকণা গোস্বামী: ছোট্ট কাপড়ের টুকরোর ওপর ছন্দবদ্ধভাবে এগিয়ে চলেছে সূচ আর সুতো। নিপুণ বুননে ফুটে উঠছে মুক্ত বিহঙ্গের ছবি। আর সৃষ্টি-সুখের এই উল্লাসের মধ্যেই মুক্তি খুঁজে পেয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রীতিকণা গোস্বামী। বাংলার নকশিকাঁথার কাজ করেই আজ সমাদৃত সোনারপুরের ন'নম্বর ওয়ার্ডের এই সেলাই-দিদিমণি। বুধবারই চলতি বছরের পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপক হিসেবে প্রীতিকণা গোস্বামীর নাম ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সোনারপুরের বিখ্যাত সূচিশিল্পীর বাড়িতে পৌঁছেছে সেই খবর। পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত সোনারপুরের প্রীতিকণা গোস্বামী। পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত সূচিশিল্পী প্রীতিকণা গোস্বামী বলেন, “সম্মান পাওয়াটা খুবই আনন্দের ব্যাপার। সারা জীবনের পরিশ্রমের ফল। সেটা আজ পেলাম। ভগবান হয়তো কষ্টের ফল আজ প্রাপ্তি দিলেন। তার জন্য আমি খুবই খুশি। এই কাজ যাতে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, ভগবান যেন সেই আশীর্বাদ করে।’’

তিন দশকের বেশি সময় ধরে এই কাজ করে চলেছেন প্রীতিকণা। বয়স বেড়েছে। চোখে চশমা এসেছে। কিন্তু সেলাই থামেনি। মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারান প্রীতিকণা। মা ও ৫ বোনের সংসারে নেমে আসে দারিদ্র। জেঠুর বাড়িতে থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা। বান্ধবী রমা দাসের সান্নিধ্যে সেলাইয়ে উৎসাহ পান। পেশাদার সূচিশিল্পী হিসেবে একটি সংস্থায় সেলাইয়ের কাজে যোগ দেন তিনি। সেলাইয়ের সঙ্গে সেই যে নিবিড় বন্ধনে জড়ালেন, যত সময় গিয়েছে, ভালবাসার সেই বন্ধন ততই পোক্ত হয়েছে।


১৯৯০ সালে ক্রাফটস কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল থেকে নকশিকাঁথার কাজের বরাত পান প্রীতিকণা। সেই কাজ এতটাই ভাল হয় যে পরের বছরই নকশিকাঁথার কাজ শেখানোর একটি বিভাগ খোলা হয়। প্রীতিকণার দায়িত্বে সেই কমলাদেবী কাঁথা সেন্টার আজও চলছে। সূচিশিল্পে ২০০১ সালে জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। প্রচারের আলোয় না থেকে, নীরবে, একাগ্রচিত্তে কাজ করে চলা এই সেলাই-সাধিকাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করল কেন্দ্রীয় সরকার। পদ্মশ্রী প্রাপক সূচিশিল্পী বলেন, “আমি নিজের থেকে কালার কম্বিনেশন করে, আরও কত সূক্ষ্ম করা যায়, আরো কত ভাল করা যায়, সেই চেষ্টা আমার সব সময় ছিল। আমার পড়াশোনা তাই করছে। চেষ্টা করছি আমাদের বাংলার সম্পদ যাতে বজায় থাকে।’’ শুধু সেলাই-শিল্পের বিকাশ নয়, গ্রাম বাংলার মহিলাদের সুচ-সুতোর হাত ধরে স্বাবলম্বীদের পাঠও দিচ্ছেন সোনারপুরের সেলাইন দিদিমণি।


আরও পড়ুন: Presidency University: বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজো-বিতর্ক, এবার মদনের নিশানায় প্রেসিডেন্সি