কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম আইন কলেজ। সেখানে কলেজের ভিতরেই আইনের পড়ুয়াকে গণধর্ষণ! অভিযুক্ত আইনেরই ৩ জন ছাত্র। আর এই ৩ জনের সঙ্গে রয়েছে শাসক-যোগ, এমনটাই খবর। এঁদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের যে তৃণমূল যোগ অত্যন্ত প্রবল তা দেখা যাচ্ছে সোশাল মিডিয়া থেকে কলেজের অভ্যন্তরের দেওয়ালে। ধৃতের ফেসবুক প্রোফাইল। সেখানে ইন্ট্রো হিসেবে লেখা- ল কলেজের TMCP ইউনিটের প্রাক্তন সভাপতি।

এমনকী ফেসবুকে তাঁর প্রোফাইল থেকে এও জানা যাচ্ছে, তিনি বর্তমানে ক্রিমিনাল ল'ইয়ার হিসেবে আলিপুর কোর্টে প্র্যাকটিস করলেও, সাউথ ক্যালকাটা ল'কলেজে তিনি 'অস্থায়ী কর্মী' হিসেবে কাজ করেন। এই কথা প্রায় স্বীকারোক্তি-ন্যায় জানিয়েছেন সাউথ ক্যালকাটা ল'কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল নয়না চট্টোপাধ্যায় স্বয়ং। তিনি এবিপি আনন্দকে জানিয়েছেন,  'উনি কলেজের অস্থায়ী স্টাফ। গভর্নিং বডির নির্দেশে উনি অস্থায়ী স্টাফ হিসেবে আছেন। মাস ৬-৭ ধরে। ৪৫ দিন করে করে রাখা হয়েছে। উনি এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। ল'কলেজের ডিগ্রিও আছে। সেই মত অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছিল গভর্নিং বডি।' 

যদিও তৃণমূলের সঙ্গে মনোজিতের সব সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়, 'যাঁদের নামে অভিযোগ আছে তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে কোনওদিন যুক্ত ছিলেন না। কোনওভাবেই যোগ নেই। সমর্থক কি না আমি বলতে পারব না। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। আদর্শে যারা তৃণমূল করে, তাঁরা কখনও কোনও অন্যায় করতে পারে না।' 

এদিকে, মনোজিতের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের একাধিক ছবি। কে নেই তালিকায়। মন্ত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূল বিধায়ক-কাউন্সিলর। TMCP-র রাজ্য সভাপতি থেকে শুরু করে দক্ষিণ কলকাতা যুব তৃণমূলের সভাপতি শাসকদলের নেতামন্ত্রীদের একাধিক ছবি ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। সেখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে তৃণমূলের সঙ্গে মনোজিতের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি। 

এরই মধ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মনোজিৎ মিশ্রকে দাঁড়িয়ে থাকার একটা পুরনো ছবি পোস্ট করেছেন শুভেনদু অধিকারী। ওপরে লেখা, কসবা ল'কলেজের ধর্ষণকারীর সঙ্গে 'কালীঘাটের কাকুর ভাইপো'। এই ছবিটি পোস্ট করে বিরোধী দলনেতা লিখেছেন, 'অপরাধের সাম্রাজ্য এমনি এমনি স্থাপিত হয়নি। বিভিন্ন কুকীর্তিবাজদের সান্নিধ্যে ফুলে ফেঁপে বড়ে হয়েছে।' প্রশ্ন উঠছে, শুধুমাত্র শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলেই কি এতবড় স্পর্ধা?

২০২৪ এর অগাস্টে আর জি কর কাণ্ডে অভয়ার স্মৃতি এখনও দগদগে। শহরের মেডিক্যাল কলেজ হোক কিংবা ল'কলেজ সমাজ গড়ার দুই প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে কি নিরাপদ নন ছাত্রীরাই? কেন বিভীষিকাময় হয়ে উঠবে কলেজের পরিবেশ? কেন আতঙ্ক গ্রাস করছে শিক্ষাঙ্গনগুলিকে? সে প্রশ্ন উঠল আরও মর্মান্তিক এক ঘটনার মধ্য দিয়েই।