কলকাতা : আদরের মেয়েকে কৈলাসে স্বামী গৃহে ফিরিয়ে দেওয়া । শোভাবাজার রাজবাড়িতে ( Sovabazar Rajbari ) মন খারাপের দশমী ( Dashami ) । আর কয়েকঘণ্টা পরই দালান হয়ে যাবে ফাঁকা। যে দালানে তিন তিন করে তৈরি হয়েছিল মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি। এবার তাঁকে বিদায় জানানোর পালা। বিজয়ার পুজোপাঠ হয়ে গিয়েছে সকালেই। কানে কানে মাকে বলা হল, আবার এসো মা। তারপর কনকাঞ্জলি পর্ব।
এই বাড়িতে দুর্গাপুজো হচ্ছে ২৬৭ বছর ধরে। রাজা নবকৃষ্ণ দেবের হাত ধরে ১৭৫৭ সালে শুরু হয় এই পুজো। ইংরেজ আমলে এ বাড়িতে ব্রিটিশরাও আসতেন অতিথি হয়ে। উত্তর কলকাতার অন্যতম প্রাচীন পুজো এটি। সাবেকিয়ানা আর বনেদিয়ানার মেলবন্ধন ঘটে এই পুজোয়। ঘরের মেয়ে রূপে পূজিতা উমাকে দেওয়া হয় মিষ্টি ভোগ। বরাবরের মতো এবারও মেদিনীপুর থেকে আসেন মিষ্টির কারিগরেরা। চাল, কলা দিয়ে নৈবেদ্য এবং দুধ, মিষ্টি, সন্দেশ দিয়ে দেবীকে মিঠাই ভোগ নিবেদন করা হয়। শোভাবাজার রাজবাড়িতেই ভিয়েন বসে। সেখানে ১০-১২ রকমের মিষ্টি তৈরি হয়। লাল মিষ্টি আর সাদা মিষ্টিই প্রধান। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী বিকেলে মিছরি, জল ও মাখন দিয়ে দেবীকে শীতল ভোগ দেওয়া হয়। রাতে শুকনো মিষ্টি সহযোগে ফের মিঠাই ভোগের আয়োজন করা হয় শোভাবাজার রাজবাড়িতে।
কাঁধে চাপিয়ে বিসর্জন
এ বাড়ির রীতি হল, বাহকের কাঁধে চাপিয়ে, শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকে শোভাযাত্রা করে বাগবাজার ঘাটে গিয়ে গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর রীতির বদলে এখন কী নিয়ম
দেব বাড়িতে বিজয়া দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে ওড়ানো হত নীলকণ্ঠ পাখি। তবে এখন সেই নীলকণ্ঠ পাখি বিলুপ্তপ্রায়। তাই প্রাচীন রীতিতে আনা হয়েছে বদল। এখন থার্মোকলের নীলকণ্ঠ পাখি তৈরি করে গ্যাস বেলুনের মাধ্যমে তা উড়িয়ে দেওয়া হয় আকাশে।
কলকাতায় গঙ্গার ঘাটে আজ কেমন প্রস্তুতি
কলকাতায় দশমীর সকালে গঙ্গার ঘাটে বিসর্জনের প্রস্তুতি চলছে। কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জলে-স্থলে রয়েছে পুলিশের নজরদারি। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। ড্রোন উড়িয়েও নজরদারি চালানো হবে। গঙ্গাবক্ষে টহল দিচ্ছে রিভার ট্রাফিক পুলিশ। দশমীর দিন দুপুর সোয়া ১টা থেকে বন্ধ থাকবে চক্ররেল পরিষেবা। এদিন প্রথমে বাড়ির ঠাকুর বিসর্জন হবে। এরপর একে একে বারোয়ারি পুজোর প্রতিমা বিসর্জনের পালা। বাবুঘাট, জাজেস ঘাট, বাগবাজার ঘাট, আহিরীটোলা ঘাট-সহ গঙ্গার একাধিক ঘাটে চলবে বিসর্জন।
বিজয়ার প্রস্তুতি কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির পুজোতেও
মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির পুজো ৩০০ বছরের বেশি পুরনো। সকাল থেকে শুরু হয়েছে দেবী বরণের প্রস্তুতি। মাকে বরণ করার পর শুরু হবে সিঁদুর খেলা। এরপর দর্পণে বিসর্জন। দুপুরের পর কাটি গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জন হবে। পুজো দেখতে বিদেশ থেকেও এসেছেন পর্যটকরা।
আরও পড়ুন :
কেন বিজয়া দশমীর দিন রাবণ দহন করা হয়? দেশজুড়ে দশেরা পালনের কী রীতি ?