কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের জল্পনা উস্কে দিয়েছিলেন নিজেই। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে তাঁর থাকা নিয়ে জল্পনা ছিল বিস্তর। কিন্তু  শেষ পর্যন্ততৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দেখা গেল না শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। দলের তরফে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ফেরা নিয়ে কিছু ভাবা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দলের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। আবার আগে ২১ নিয়ে আবেগের কথা জানালেও, তিনি মঞ্চের লোকই নন বলে এখন দাবি করছেন শোভন। (Sovan Chatterjee)


তৃণমূলে তাঁর প্রত্যাবর্তন নিয়ে সম্প্রতি মুখ খোলেন শোভন। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারে বলে দিয়েছিলেন ইঙ্গিত। তাঁর বক্তব্য ছিল, "২১ জুলাই আমার কাছে যতটা যন্ত্রণার, ততটাই আবেগের। রাজনীতির যেদিকেই অবস্থান করি না কেন, ওই দিন মন ভারাক্রান্ত থাকে। পরিবেশ, পরিস্থিতি হলে এবার নিশ্চয়ই পৌঁছে যাব।" (TMC News)


শোভনের জন্মদিনে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপহার পাঠানো, তাঁর বাড়িতে কুণাল ঘোষের যাতায়াত, কেক খাইয়ে দেওয়া, টুকরো টুকরো এই ছবিগুলি মিলিয়ে গত কয়েক দিন ধরে আস্ত অ্যালবাম তৈরি হচ্ছিল। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চেই তৃণমূলে শোভনের প্রত্যাবর্তন ঘটে পারে বলে চলছিল জল্পনা। কিন্তু রবিবার ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে তৃণমূলের ছোট-বড় সব নেতাকে দেখা গেলেও, শোভনকে দেখা যায়নি। (TMC 21 July Rally)


আরও পড়ুন: Arambag News: এবার রেলের মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত হবে আরামবাগ-বিষ্ণুপুর? তৃণমূল সাংসদ মিতালি বাগ কী জানালেন সংসদে?


সেই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে জয়প্রকাশ বলেন, "দলের তরফে এই অ্যাজেন্ডা বা এই বিষয়ে কিছু ভাবা হচ্ছে বলে আমার জানা নেই। আগের দিনও বলেছিলাম যে, আমার মনে হয় না ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে ওঁদের দেখা যাবে। দেখা গিয়েছে না যায়নি, তা দেখেছেন আপনারা।" কেন ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দেখা গেল না তাঁকে, সে প্রসঙ্গে শোভনের বক্তব্য, "যাব কোথায়? মঞ্চে তো? আমি তো মঞ্চের লোক নই! স্বাভাবিক ভাবেই ২১ জুলাই আমাদের কাছে একটা আবেগ।"


শোভনের বাড়িতে ঘন ঘন যাঁর যাওয়া নিয়ে জল্পনা শুরু হয়, সেই কুণালের গলাতেও এখন অন্য সুর। তাঁর বক্তব্য, "আমার যাওয়ার সঙ্গে শোভনদা এবং বৈশাখীর মঞ্চে আসার কোনও সম্পর্ক নেই। আমি ব্যক্তিগত সৌজন্য, আলাপ, আমন্ত্রণ, বৈশাখীর মায়ের পরলৌকিক কাজ...আমি তো বার বার বলে এসেছি যে আমি যাচ্ছি। কিন্তু আমি কারও দূত হয়ে যাচ্ছি না।"


এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূলে শোভনের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। শোভনের ফেরা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে কি কোনও বাধা তৈরি হয়েছে? উঠছে প্রশ্ন। বরং তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের জল্পনা উস্কে দেওয়ার জন্য শোভনকে কটাক্ষও করেন জয়প্রকাশ। তিনি বলেন, "ঢাকঢোল বাজিয়ে, মিডিয়াকে বলে, 'আমি আসতে ইচ্ছুক, দিদির সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে, বিজয়ার ফোঁটা নিয়েছি...সুতরাং বাধা কোথায়!' এরকম হয় না। রাজনৈতিক ব্যাপারটা অন্য রকমের হয়।"


তাহলে কি তৃণমূলে ফিরতে বাধার মুখে পড়ছেন তিনি? শোভনের জবাব, "কারও পছন্দ-অপছন্দ তো থাকবেই! তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ। যেরকম পারটেক হওয়ার চেষ্টা করেছে, বেশ ভাল। আমি এনজয় করেছি।"


২০১৯ সালে দিল্লি গিয়ে একসঙ্গে বিজেপি-তে নাম লেখান শোভন এবং তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১ সালে বিজেপি-র হয়ে মমতার বিরুদ্ধে প্রচারেও নেমেছিলেন তাঁরা। ২০২১ সালেই আবার বিজেপি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। সম্প্রতি তাঁদের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। কিন্তু জোড়াফুল শিবিরে তাঁদের ফেরা আটকাতে 'থার্ড পার্টি'র তৎপরতা উড়িয়ে দিচ্ছে না বৈশাখী। তাঁর কথায়, "কেউ কেউ চেষ্টা করবে, যাতে শোভন কোনও ভাবেই দলে না ফেরে। এটা তো খুব স্বাভাবিক! রাজনীতির আঙিনায় এ জিনিস চলতে থাকূে। আমার মনে হয়, এই ধরনের কথাবার্তা শোভনের কাছে কখনও বালখিল্য মনে হয়, কখনও বা মনে হয়, এগুলোয় কর্ণপাতই করব না। শোভন এগুলো ট্যাকল করতে জানে।" ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আরও একটি ২১ জুলাইয়ের সভা রয়েছে। সেখানে অন্য ছবি দেখা যাবে কি? পাল্টাবে কি বর্তমান সমীকরণ? এখন সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।