কলকাতা: মেলা-খেলায় কোটি কোটি দিতে পারলে, সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ (DA) কেন দেওয়া হবে না? প্রশ্ন তুলে রাজ্যকে তীব্র কটাক্ষ করল বিরোধীরা। উন্নয়ন ও কর্মীদের পাওনা, দুটোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হয় সরকারকে, পাল্টা বলল শাসকদল।


সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সরকারি কর্মীরা: কবে মিলবে রাজ্য (West Bengal) সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘভাতা? বিভিন্ন সরকারি কর্মী সংগঠনের মুখে যখন এই প্রশ্ন ক্রমেই জোরাল হচ্ছে, তখন বকেয়া DA মেটানোর হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গেছে রাজ্য সরকার। অন্যদিকে, রাজ্য সরকার হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, অতিরিক্ত DA দিতে গেলে অর্থনীতিতে বিপর্যয়মূলক প্রভাব পড়বে। আর এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সরকারি কর্মীরা। তাদের প্রশ্ন,  বকেয়া ডিএ কি তাঁরা পাবেন না? কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের ডিএ’র ফারাক কি কখনও মিটবে না?  অন্যান্য রাজ্য সরকার যে হারে ডিএ দিচ্ছে, তাও কি মিলবে না?  ২০১৬ সালের পঞ্চম বেতন কমিশন অনুযায়ী,  কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীরা ১২৫ শতাংশ হারে ডিএ পেতেন।তখন রাজ্য সরকারের কর্মীরা পেতেন ৭৫ শতাংশ ডিএ। সেইসময় ফারাক ছিল ৫০ শতাংশ।পরে রাজ্য সরকার আরও ১৬ শতাংশ ডিএ বাড়িয়ে দেয়। ফলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কর্মীদের ডিএ-র ফারাক দাঁড়ায় ৩৪ শতাংশে।


অন্যদিকে, ষষ্ঠ বেতন কমিশন অনুযায়ী, বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীরা ৩৮ এবং এ রাজ্যের সরকারি কর্মীরা ৩ শতাংশ হারে ডিএ পান। ফারাক এখনও ৩৫ শতাংশ। সেই বকেয়া ডিএ নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই চলছে। স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল, কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ এবং ডিভিশন বেঞ্চ পেরিয়ে এখন মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে। অন্যদিকে, এ রাজ্যের সরকার যখন তার কর্মীদের ৩ শতাংশ হারে ডিএ দিচ্ছে তখন কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে ৩৮ শতাংশ হারে ডিএ পাচ্ছেন সরকারি কর্মীরা। বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ সরকার তাদের কর্মীদের ডিএ দিচ্ছে ৩৮ শতাংশ হারে।


বাংলার প্রতিবেশী রাজ্য, বিজু জনতা দল শাসিত ওড়িশায় সরকারি কর্মীরা ৩৪ শতাংশ হারে ডিএ পান। এই বিষয়ে গতকাল দিলীপ ঘোষ বলেন, “বাকি রাজ্যগুলো কী করে DA দিচ্ছে? কেন্দ্র কী করে দিচ্ছে? এই রাজ্যে টাকা যাচ্ছে কোথায়? সব টাকা নেতাদের পেটে যাচ্ছে।’’ পাল্টা সৌগত রায় বলেন, “অন্যান্য রাজ্য সরকার সবাই কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিচ্ছে এমন কোন তথ্য আমার কাছে নেই। দিলীপ ঘোষের কাছে থাকলে উনি সেটা জানাবেন। দিলীপ ঘোষ কোনওদিন সরকারি ছিলেন না, সরকার চালাবার কোন অভিজ্ঞতা নেই। ওরতো দায়িত্বজ্ঞানহীন বিবৃতিতে কোন খরচ নেই। রাজ্য সরকারকে সবদিক ভেবে উন্নয়ন এবং কর্মচারীদের মাইনে দেওয়ার এই দুটোর মধ্যে ভারসাম্য রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’’


কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী থেকে শুরু করে বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো একাধিক সামাজিক প্রকল্পে বর্তমানে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে রাজ্য সরকারের।  অন্যদিকে, এবছর পুজো কমিটিগুলিকে প্রায় ২৬০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে সরকার। বিরোধীদের প্রশ্ন, সব বিষয়ে খরচ করলেও, কেন সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ দেওয়ার সময় আর্থিক বিপর্যয়ের কথা বলা হচ্ছে?  বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ অন্য সময় ভাবা উচিত। মেলা-খেলা হচ্ছে। শুধু হকের টাকার সময় বিপর্যয়?’’ এই প্রেক্ষিতে আদৌ কি রাজ্য সরকারি কর্মীরা বকেয়া ডিএ পাবেন?  উত্তর মিলবে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেওয়ার পর।


আরও পড়ুন: AAP Poster: পঞ্চায়েত ভোটে ঝাঁপাবে কেজরিওয়ালের দল? বাদুড়িয়ায় আম আদমি পার্টির পোস্টার ঘিরে জল্পনা