কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, আশাবুল হোসেন ও দীপক ঘোষ, কলকাতা: অযোগ্য় হয়ে চাকরি কিনেছেন যাঁরা, তাঁদের শাস্তি হোক। কিন্তু যোগ্য়দের জীবনে অনিশ্চয়তার এই অন্ধকার নেমে আসবে কেন? যাঁরা পরীক্ষা দিয়ে, ইন্টারভিউ পাশ করে, মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন তাঁদের কেন হয়রান হতে হচ্ছে? এর দায় নেবে তো রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশন? উঠছে প্রশ্ন। (SSC Case)
২ ঘণ্টার শুনানিতেও সুপ্রিম কোর্টে উত্তর মিলল না ২৬ হাজার চাকরিপ্রাপকের ভবিষ্যৎ কী হবে। রাজ্য সরকার অথবা CBI কি অযোগ্য়দের চিহ্নিত করে হাজার হাজার যোগ্য় চাকরিপ্রাপকদের চাকরি বহাল রাখতে সাহায্য় করবে, মিলল না এই প্রশ্নের উত্তর। মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য পুরো প্যানেল বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন। (Kolkata News)
কিন্তু তাঁদের কেন এই অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হবে, প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন যোগ্যরা। এক যোগ্য চাকরিপ্রাপক এ নিয়ে এবিপি আনন্দে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, "দুর্নীতি করেছে রাজ্য সরকার। দুর্নীতি করেছে SSC, পর্ষদ এবং রাজ্য শিক্ষা দফতর। আমরা প্রত্যেকে জানি। কিন্তু যারা করল এবং যারা করাল, তারা কিন্তু ইতিমধ্যেই চিহ্নিত। তাদেরকে বাদ দিয়ে যাদের নামে কোনও অভিযোগ নেই তাদের কেন চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া হবে না?"
SSC দুর্নীতি মামলায় বারবার একটাই প্রশ্ন উঠছে যাঁরা পরীক্ষা দিয়ে, ইন্টারভিউ পাশ করে, মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন তাঁদের কেন হয়রান হতে হচ্ছে? এর দায় নেবে তো রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশন? যোগ্য চাকরিপ্রাপকরাও সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, "আমাদের তো কোনও অভিযোগ নেই। আমাদের কেন ফের পরীক্ষা দিতে হবে?"
যোগ্য় চাকরিপ্রাপকদের প্রশ্ন, তারা পড়াশোনা করে, রাতের পর রাত খেটে রাজ্য় সরকার ও এসএসসি-কে দেখে পরীক্ষায় বসেছিলেন। চাকরি পেয়েছিলেন। তারপর দুর্নীতি হয়েছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী জেলে। প্রাক্তন শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীর মেয়ের চাকরি গেছে। শিক্ষার দণ্ডমুণ্ডের আরও বহু কর্তা গ্রেফতার হয়েছেন। অর্থাৎ দুর্নীতির দায় তাঁদের। যারা টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি করেছেন। যাঁরা অযোগ্য় হয়ে চাকরি কিনেছেন তাঁদের শাস্তি হোক। কিন্তু যোগ্য়দের জীবনে অনিশ্চয়তার এই অন্ধকার নেমে আসবে কেন?
এদিন সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়িয়ে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি হয়েছে। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আইনজীবী বলেন, "প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এই জন্যই যে দুর্নীতিটা হয়েছে মূলত সরকার এবং SSC-র মদতে...তা নাহলে হঠাৎ করে সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরি করবে কেন? এবং সেই সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরি করছে অবৈধভাবে নিযুক্ত হওয়াদের বাঁচানোর জন্য। তাহলে আমি যাদের নিয়ে অপরাধ করেছি তাদের বাঁচাতেই হবে। তা না হলে কোনও সরকার কখনও অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের বাঁচাবার চেষ্টা করে? ভাই তুমি চলে যাও, তোমার জায়গায় ভাল লোক আসুক। এবং যে পদ্ধতিতে সিলেকশন হয়েছে নাইসাকে সিলেক্ট করেছে এই সবটাই একটা বেআইনি কার্যক্রমের মধ্যে পড়ে।"
সিপিএম থেকে বিজেপি, সমস্বরে বলছে, দুর্নীতির দায় নিতে হবে রাজ্য সরকার এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনকেই। যোগ্য়রা যাতে বঞ্চিত না হয়, তাও সুনিশ্চিত তাদেরই করতে হবে। আর তাতেই প্রশ্ন উঠছে, যোগ্য মেধাবীদের এই হেনস্থার দায় কার?