হিন্দোল দে, কলকাতা : একদিনে আদালতে সরকারের জোড়া ধাক্কা। যাদবপুরের প্রাক্তনী হিন্দোল মজুমদারের পর মালদা থেকে গ্রেফতার হওয়া শিক্ষক রেজাউল হকেরও জামিন মঞ্জুর করল আদালত। মালদার শিক্ষককে গ্রেফতার করে কোর্টে পরপর প্রশ্নের মুখে পুলিশ। আজ SSC ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ। তবে এই অভিযানের আগেই বিস্ফোরক অডিও টেপ প্রকাশ করে পুলিশ। হিংসাত্মক আন্দোলনের পরিকল্পনা রয়েছে আন্দোলনকারীদের, দাবি করা হয় পুলিশের তরফে। হামলার চক্রান্তের অডিও টেপ শুনিয়ে গ্রেফতার করা হয় মালদার শিক্ষক রেজাউল হককে। এরপর আদালতে পেশ করা হলে আজ শিক্ষকের জামিন হয়েছে।
চক্রান্তের অভিযোগে শিক্ষককে গ্রেফতার করে কোর্টে অস্বস্তিতে পুলিশই। শিক্ষকদের আন্দোলনে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর আইনে মামলা। বিচিত্র ধারা দিয়ে SSC অডিওকাণ্ডে বিচারকের প্রশ্নের মুখে পুলিশ। কীসের ভিত্তিতে গ্রেফতার? পুলিশের শোনানো টেপে কার সঙ্গে কথোপকথন? বিচারকের প্রশ্নের মুখে বলতেই পারল না বিধাননগর পূর্ব থানার পুলিশ। হেফাজতে নিয়ে অডিও স্যাম্পেল নিতে বললেন বিচারক। তাতে উল্টো সুর পুলিশের। 'এখনই অডিও স্যাম্পেল নেওয়ার প্রয়োজন নেই', বলল পুলিশ। অন্যদিকে, ধারার সামঞ্জস্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে IC-র হাতে BNS-র বই ধরালেন বিচারক।
'কীসের ভিত্তিতে গ্রেফতার করলেন, তারই তো উল্লেখ নেই। রেড করতে গেলে উল্লেখ করেন, কোন সোর্সের ভিত্তিতে, এখানে সেটা নেই কেন? ফোনে কথোপকথনের সঙ্গে যে যে ধারা দিয়েছেন, তার সামঞ্জস্য নেই', SSC ভবন অভিযানের আগে ধরপাকড় নিয়ে কোর্টের প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা। 'কথোপথনের ট্রান্সক্রিপ্টেড স্ক্রিপ্ট FIR-এর সঙ্গে যুক্ত নেই কেন?' মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা মালদার শিক্ষকের গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পুলিশ। 'কথোপকথনে যা আছে, তাতে কোনও সরকারি কর্মী, পুলিশকে ভয় দেখানো হচ্ছে? কীভাবে কোন সরকারি কর্মীকে ভয় দেখানো হচ্ছে, তাও স্পষ্ট নয়। যাকে গ্রেফতার করেছেন, ফোনের অপর প্রান্তে কে ছিলেন, চিহ্নিত করেছেন? এই মামলায় সেনা, নৌবাহিনীর ধারা যুক্ত করেছেন, এটা কী কারণে? এখানে তো কোনও সেনা, নৌসেনা মোতায়েন করা হয়নি?', পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইসিকে বিএনএসের বই দিলেন বিচারক।
'জানি আপনারা চাপের মধ্যে কাজ করেন, কিন্তু ধারার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। যার সঙ্গে ওই ব্যক্তির কথা হয়েছিল, তার সম্পর্কেও তো কিছু জানেন না। বিষয়টি খুব আকস্মিক', গ্রেফতারি নিয়েই প্রশ্ন তুলে মন্তব্য বিচারকের। 'আপনারা নিজেরাই কেস করছেন, কিন্তু কারও কি কিছু জানার অধিকার নেই? ধৃত রেজাউল হককে ৭ দিনের পুলিশ হেফাজত দিচ্ছি ভয়েস স্যাম্পল নিন', শিক্ষকের গ্রেফতারি নিয়ে পুলিশকে বললেন বিধাননগর আদালতের বিচারক। 'এই মুহূর্তে ভয়েস স্যাম্পেল নেওয়ার দরকার নেই, ভবিষ্যতে হলে আবেদন', আদালতে অভিযুক্তের ভয়েস স্যাম্পল নিয়ে জানাল পুলিশ। 'তাহলে আপনারা এই মুহূর্তে ভয়েস স্যাম্পল নিচ্ছেন না, এটা উল্লেখ রাখছি', বললেন বিধাননগর মহকুমা আদালতের বিচারক অর্ঘ্য আচার্য।