কলকাতা: শেষ পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই মিটল SSC-র শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে OMR শিটের প্রতিলিপি দেওয়া হল পরীক্ষার্থীদের। রাজ্য জুড়ে ৬৩৬ কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে মিটল পরীক্ষা। প্রায় ন'বছর পর রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হল, আর সেই পরীক্ষায় বসলেন ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৯১৯ পরীক্ষার্থী। আর পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে সকলেই মানলেন যে, প্রশ্নপত্র অত্যন্ত সহজ হয়েছে। প্রথম বার পরীক্ষায় বসলেন যাঁরা, তাঁরা অনেকেই এতে খুশি। যদিও চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ এ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলছেন। (SSC Exam 2025)

পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হন এক চাকরিপ্রার্থী। তিনি বলেন, "এর আগে ২০১৬ সালে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ১ নম্বরের জন্য প্যানেলে নাম ওঠেনি। তবে আগের বারের তুলনায় এবারে প্রশ্ন সোজা। দেখা যাক কী হয়।" দুর্নীতি, মামলা, আন্দোলন-এতকিছুর পর ভরসা পাচ্ছেন কি তিনি? জবাবে বলেন, "স্বচ্ছ ভাবে পরীক্ষা হলে ভরসা তো করাই যায়!" (SSC Recruitment Exam 2025)

অন্য এক চাকরিপ্রার্থী জানান, ২০১৬ সালে ফর্ম ফিলআপ করলেও পরীক্ষায় বসতে পারেননি তিনি। অন্য রাজ্যে, অন্য পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। এবারের পরীক্ষা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, "প্রচণ্ড সোজা প্রশ্ন হয়েছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, এর একটা ভালদিকও আছে, আবার খারাপ দিকও আছে। ভাল যে, কম সময়ের জন্য ঘাটতির প্রভাবটা পড়ল না। কিন্তু খারাপ হল এই যে, কাট অফটা কমে যাবে। ভাল নম্বর পেলে সিকিওরিটির ভরসা ছিল। কিন্তু তা আর থাকছে না। ৫০-এর বেশি পেলেও চাকরির সুযোগ কিন্তু কমে যাচ্ছে।"

এবারেই প্রথম পরীক্ষা দেওয়া এক তরুণী বলেন, "পরীক্ষা ভালই হয়েছে আমার। একটু ভুল হলেও, বাকি ঠিক আছে। এটা আমার প্রথম বছর। আশা রাখছি।" এই যে এত আন্দোলন, এত জটিলতা, তা নিয়ে তরুণী বলেন, "পড়াশোনার চর্চা থাকলে অবশ্যই হবে। তবে দীর্ঘ দিন চর্চা না থাকলে, বেরিয়ে গেলে, কিন্তু হবে না। ঝুঁকি তো থাকেই!"

প্রশ্নপত্র সোজা হওয়া নিয়ে আর এক তরুণী বলেন, "প্রশ্নপত্র ভালই। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। এতটা সোজা হলে, প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। সবাই ভাল নম্বর পাবে। সেদিকটা দেখলে ভাল হতো। আমরা তো নতুন! ২০১৬ সালে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা এমনিতেই ১০ নম্বর বেশি পাবেন। আমরা কিন্তু সেটা পাব না। আমাদের কিছুটা সমস্যা হবে। এমনি প্রশ্নপত্র ভাল হয়েছে।"

এত বছর শিক্ষকতার পর নতুন করে পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন তুলছিলেন চাকরিহারাদের একাংশ। চাকরিহারাদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ চিন্ময় মণ্ডল, মেহবুব মণ্ডলও এদিন পরীক্ষায় বসেন। নতুন করে পরীক্ষায় বসলেও, প্রতিবাদের অংশ হিসেবে কালো পোশাক পরে হলে ঢোকেন তাঁরা। পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে চিন্ময় বলেন, "যথেষ্ট সহজ প্রশ্ন হয়েছে। আমার বিষয়টা নিয়ে এটা বলতে পারি। অন্য বিষয়েও খোঁজ নিলাম। অর্থাৎ কাট অফ হাই। সিলি মিসটের হওয়ার চান্স তো থাকেই! দেখা যাক কার কী হবে।"

অন্য দিকে, পরীক্ষায় বসলেও, নতুন করে কেন এউ বিভীষিকার মধ্যে দিয়ে যেতে হল তাঁদের, তার জন্য প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, "যোগ্যদের নতুন করে পরীক্ষা দিতে হল। এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির জন্য আমাদের কিন্তু দোষ নেই। নিয়োগ হয়ে গেলেও আবার দু'-তিন বছর পর কী বেরোবে, এখনই তা বলা সম্ভব নয়। আমি অস্বস্তি অনুভব করেছি আজ। এবারে মাধ্যমিকের খাতা নিয়েছি যে ঘরে, আজ সেই ঘরে বসে পরীক্ষা দিয়েছি। মানসিক ভাবে অস্বস্তি বোধ করছিলাম আমি।"