সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: শুধু মানিক, সুবীরেশ, শান্তিপ্রসাদ, কল্যাণময়রা নন, চাকরি- বিক্রির টাকা সরাসরি পৌঁছেছে শিক্ষা দফতরের কয়েকজন আধিকারিকেক কাছেও। জমা পড়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এমনই দাবি করল সিবিআই। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, পর্ষদের একাধিক আধিকারিকদের সঙ্গে সরাসরি এজেন্টদের যোগাযোগ ছিল। এই এজেন্টদের মাধ্যমেই চাকরি-বিক্রির টাকা পৌঁছেছে শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
সিবিআইয়ের দাবি, এখনও পর্যন্ত এমন ৭-৮ জন সরকারি আধিকারিকের খোঁজ মিলেছে। এঁদের কাছে পৌঁছনো টাকার অঙ্ক কোটির বেশি। প্রায় ১৫ জন এজেন্টের সঙ্গে শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। হাতে এসেছে টাকা হস্তান্তরের নথিও। এজেন্টদের পাশাপাশি, এই সরকারি আধিকারিকদেরও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে সিবিআই। কাদের নির্দেশে চাকরি-বিক্রির টাকা শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের পাঠানো হয়েছে তার খোঁজ শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
এর আগে ইডি দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ক্লার্ক অর্ণব বসু। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অ্যাকাউন্টস্ বিভাগে কর্মরত চুক্তিভিত্তিক কর্মী অর্ণব বসুর সল্টলেকের শ্বশুরবাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল বেশ কিছু নথি, অর্ণবের ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন।
ইডি-র দাবি, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল অর্ণবের। মানিকের নির্দেশেই অর্ণব বিভিন্ন জায়গায় মেল ও চিঠি পাঠাতেন বলে ইডি-র দাবি। সূত্রের খবর, সেই সমস্ত মেল বা চিঠি কাদের পাঠানো হত, তা নিয়ে শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়নি বলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ক্লার্ককে ফের তলব করা হয়।
আরও পড়ুন, দু’বারই এড়িয়েছেন হাজিরা, ফের অনুব্রত-কন্যাকে তলব ইডির
এর আগেও বিস্ফোরক তথ্য জানিয়েছিল ইডি। নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়ে ভবিষ্যতে তদন্ত হতে পারে তা আগেভাগে বুঝে জাল বিছিয়েছিলেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য। গাজিয়াবাদের OMR শিট মূল্যায়নকারী সংস্থার বাঙালি অফিসার নীলাদ্রি দাসকে পেয়ে চাকরি-বিক্রির চক্রের কাজ আরও সহজ হয়েছিল। সুবীরেশ-নীলাদ্রি আঁতাঁতেই চলছিল কোটি কোটি টাকায় চাকরি কেনাবেচা। চার্জশিটে চাঞ্চল্যকর দাবি করল সিবিআই।
কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, নাইসা-র তরফে OMR শিট মূল্যায়নের পর তা পাঠানো হত SSC-র অফিসে। সেখানে নম্বর কারচুপিতে সাহায্য করতেন SSC-র কর্মী পর্ণা বসু। এই কারচুপি যাতে ধরা না পড়ে, তার জন্য OMR শিট ফের পাঠানো হত মূল্যায়নকারী সংস্থা নাইসা-র কাছে।সেখানে আসল ডেটা শিটেও বদলে যেত নম্বর। সংস্থার তরফে বাঙালি হিসেবে নীলাদ্রিকে SSC-র সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব দেওয়ায় সুবীরেশের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছিল বলে চার্জশিটে দাবি করেছে সিবিআই।