সৌমিত্র রায়, ঝিলম করঞ্জাই ও সন্দীপ সরকার, কলকাতা: যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে না পারলে ছাঁটাই করা হোক অযোগ্যদের। SSC-কে এবার ডেডলাইন বেঁধে দিতে চলেছেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। SSC অফিসের সামনে রাতভর অবস্থান-বিক্ষোভ, আটকে SSC-র চেয়ারম্যান-সহ আধিকারিকরা। রাজ্য সরকারের দুর্নীতির দায়ে চাকরি গেছে, আক্রমণ শানালেন চাকরিহারারা। পাশে পেলেন চিকিৎসকদের।জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে খাওয়ানো হল ORS.
আরও পড়ুন, কারা যোগ্য, কারা স্কুলে যেতে পারবেন ? জেলায় জেলায় গেল তালিকা, খবর সূত্রে
এক চাকরিহারা শিক্ষক বলেছেন, অযোগ্যদের টার্মিনেট করুন, তারপর আমরা স্কুলে যাব।' রাত যত গড়িয়েছে, ততই শক্ত হয়েছে চোয়াল। পেটে লাথি পড়েছে, তাই আন্দোলন আরও জোরদার করার প্রস্তুতি নিয়েছেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সোমবার SSC-র তরফে যোগ্যদের তালিকা প্রকাশের কথা ছিল।কিন্তু তা হয়নি। এ নিয়ে বাড়তে থাকে ক্ষোভ। রাতভর সল্টলেকে SSC ভবনের সামনে খোলা আকাশের নীচে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখালেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। মুহুর্মুহু স্লোগান উঠেছে। চাকরি-চোর হঠাও। চোর চোর চোর, মমতা চাকরি-চোর। চোর চোর চোর, মমতা মেধা-চোর। শোনা গেছে হুঁশিয়ারি।এক চাকরিহারা শিক্ষক বলেন,পাতাল থেকে হলেও ওই যে মিরর কপিগুলো রয়েছে, সেগুলো আপনি উদ্ধার করে আপলোড করে দিন। পরিষ্কার বার্তা মুখ্যমন্ত্রী, অনেক ছেলেখেলা করেছেন। অনেক ভাই দেখিয়েছেন, আপনার ধমক-চমকে বাংলার যোগ্য থেকে যোগ্যতম শিক্ষকরা বিন্দুমাত্র ভয় পায় না। আমরা নিরস্ত্র শিক্ষক, আমাদের রক্ত দিয়ে হলেও মুখ্যমন্ত্রীর এই ষড়যন্ত্রকে রুখে দেব। গভীর রাতে জমায়েত হঠাতে আসে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। আন্দোলনকারীদের চাপে উল্টে পুলিশই পিছু হঠে। সুপ্রিম কোর্টের গাইড লাইন দেখিয়ে তালিকা প্রকাশ না করায়, রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। আরও এক চাকরিহারা শিক্ষক বলেন, সিঙ্গল বেঞ্চে যখন বলা হয়েছিল যে, অযোগ্যদের টার্মিনেট করে দিতে হবে...মেনেছিল? আবার তো গিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে আবার ডিভিশন বেঞ্চে এসেছে। কেন এসেছে? কোনওদিন কোনও কোর্টের গাইডলাইন এরা মানে না। এরা গা-জোয়ারি করে। চাকরিহারা শিক্ষক বলেন, যোগ্য-অযোগ্য তো পৃথকীকরণই করছেন না। তাহলে বেতন কীভাবে দেবেন? বেতন তো দেওয়া সম্ভব নয় ওঁর (মুখ্যমন্ত্রীর)। তাহলে অযোগ্যদেরও বেতন দেবেন ভাবছেন! রাত পেরিয়ে সকাল। তখনও সল্টলেকের SSC ভবনের স্লোগান দিচ্ছেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে চলছে প্রতিবাদ। আর জি কর-কাণ্ডের পর এদিন SSC ভবনের সামনে চাকরিহারাদের ধর্নাস্থলেও ওঠে ন্যায়বিচারের দাবি। উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস।
বেলা যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছে আন্দোলনের ঝাঁঝ। চাকরিহারা শিক্ষিকা বলেন, আমরা রাস্তায় না খেয়ে...সারা দিন সারা রাত রাস্তায় বসে আছি...ওঁরা (SSC আধিকারিকরা) কোন লজ্জায় বিরিয়ানি খাবে? আমরা সব আটকে দিয়েছি। চাকরিহারা শিক্ষকরা এদিন অযোগ্যদের চাকরি ছাঁটাইয়ের দাবি জানিয়েছেন। চাকরিহারা শিক্ষক মেহবুব মণ্ডল বলেন, আপনি (মুখ্যমন্ত্রী) সেই যোগ্যদের তালিকাটা দিন, যারা স্কুলে যাবে। সেটা তো উনি দিচ্ছেন না। অথবা, যাদেরকে টেন্টেড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাহলে তাদেরকে টার্মিমেশন করুক আগে। দু’টো উপায় তো করছি। অযোগ্যদের প্রতি একটা মায়াবী দরদ, সেই দরদের জায়গা থেকে এটা করা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু স্পষ্ট বলেছেন, যোগ্য অযোগ্য এটা আপনারা বলছেন আমরা নির্ধারণ করতে পারিনি। এমন কোনও কাজ করবেন না যা আপনাদেরই রিভিউ পিটিশনে আপনাদের বিপক্ষে চলে যায় বা এমন কোনও কাজ করতে বাধ্য় করবেন না। বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলেন, রিভিউ পিটিশনের আগে যদি প্রকাশ করা সম্ভব নয়, সেদিন বলেছিলেন কেন? সেদিন তাহলে মিথ্যা কথা বলেছিলেন কেন, সময় কেনার জন্য? শিক্ষামন্ত্রীর নাম ব্রাত্য, এই রাজ্যের শিক্ষাও ব্রাত্য।