প্রকাশ সিনহা, কলকাতা : এসএসসি-তে নিয়োগের (SSC Recruitment Scam) দায় ফের অস্বীকার জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। পাশাপাশি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের দিকে দায় ঠেললেন তিনি। আদালতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, নিয়োগ-সংক্রান্ত রিপোর্ট যেত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় আদালতে বলেছেন, 'নিয়োগে মন্ত্রী হিসেবে আমার কোনও ভূমিকা নেই। একজন পলিসি তৈরি করে, একটা অংশ নিয়োগ করে। ক্যাবিনেট সেক্রেটারি রিপোর্ট করেন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে। প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রিপোর্ট করেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। এসএসসি আলাদা একটি বোর্ড, মন্ত্রী এসএসসি-কে নিয়ন্ত্রণ করত না। আমি জানি না কারা চাকরি পেয়েছেন। আমি ৫টি দফতরের দায়িত্বে ছিলাম, বারবার দফতর বদল হয়েছে। ১ বছরের বেশি সময় ধরে সিবিআই কিছু পেশ করতে পারেনি'।
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী নিজেকে নির্দোষ দাবি করার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের দিকে ইঙ্গিত করার পরই তা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবীর কৌস্তভ বাগচীর বক্তব্য, 'অনুপ্রেরণা ছাড়া তো জলের ঢোকও গেলে না কেউ। তাই মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণাতেই যে গোটা নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে, সেটাই বোঝাতে চাইলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বাংলার মানুষ সবটাই জানে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মুখ থেকে সত্যটা বলার শুধু অপেক্ষা।' আর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যে মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, 'পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রসঙ্গে দলের যা অবস্থান, মতামত সেটা অনেক আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে বলার কিছু নেই। উনি জামিনের আবেদন করার মাঝে আদালতে বা অন্য কোথায় কী বললেন তা নিয়েও কোনও বক্তব্য দলের নেই।'
এদিকে, জামিন চেয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর অসুস্থতার প্রসঙ্গও তুললেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কোর্টে সওয়াল 'প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু উডল্যান্ডসে ভর্তি, উনিও অসুস্থ, আমিও অসুস্থ।' যে কোনও শর্তে জামিন চেয়ে আদালতে মন্তব্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee)। তিনি বলেন, 'সামনে পুজো আসছে, পরিবার আছে, জামিন দিন'।
জামিন চাওয়ার পথে নিজেকে শুধু নির্দোষ দাবিই নয়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আদালতের কাছে দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। যাঁরা ফাসিয়েছে তাদের তিনি সামনে নিয়ে আসতে চান, তার জন্যই জামিন মঞ্জুর করা হোক বলেও দাবি করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তৎকালীন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি দলের প্রতি আস্থার বার্তা দিলেও ঘাসফুল শিবির বরাবরই বজায় রেখেছে দূরত্ব।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত বাকিদের প্রিজন ভ্যানে আনা হলেও, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জন্য 'বিশেষ ব্যবস্থা'র ইস্যু সামনে তুলে প্রভাবশালী তত্ত্বে তাঁর জামিনের বিরুদ্ধে যুক্তি সাজিয়েছিল ইডি। যদিও ইডি-র আপত্তির পরেও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর জন্য 'বিশেষ ব্যবস্থা'। আজও দেখা গেল পুলিশের বিশেষ গাড়িতেই আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আনা হল জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার পুলিশ অফিসার। এর আগে পার্থর জামিন-আবেদন খারিজ করতে আদালতে প্রভাবশালী তত্ত্ব তুলে ধরেছিল ইডি। প্রশ্ন তোলা হয়েছিল পুলিশের বিশেষ গাড়িতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আদালতে যাতায়াত নিয়ে।
আরও পড়ুন- প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রথম জামিন পেলেন মানিক ভট্টাচার্যর স্ত্রী