প্রকাশ সিন্হা ও ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: এসএসসি-এর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এবার সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য! সিবিআই সূত্রে দাবি, অনেক ক্ষেত্রে শূন্যপদের থেকে বেশি সংখ্যক প্রার্থীর কাছে পৌঁছে গেছিল নিয়োগপত্র। পরে চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে প্রার্থীরা জানতে পারেন, সেই পদে যোগ দিয়ে দিয়েছেন অন্য কেউ। এই প্রার্থীদের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে বৃহস্পতিবারই ১৮৩ জন অযোগ্য প্রার্থীর নামের তালিকা প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। সূত্রের খবর, যাঁদের সিংহভাগই যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও, কোনও না কোনও স্কুলে চাকরি করছেন। আর এই প্রেক্ষাপটেই নিয়োগ-দুর্নীতির সিবিআই তদন্ত নিয়ে, এবিপি আনন্দর হাতে এসেছে এক্সক্লুসিভ তথ্য! যা গোটা তদন্তকে নতুন মোড়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
সিবিআই সূত্রে দাবি, স্কুলে বেআইনিভাবে চাকরি দেওয়ার সময় শূন্যপদের হিসেবটুকুও রাখা হয়নি। যার জেরে এক একটা পদে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে একাধিক প্রার্থীকে। যেন স্কুলের চাকরি নয়, মিউজিক্যাল চেয়ার। যে আগে গেছে, তাকে নিয়োগ করা হয়েছে। যে পরে গেছে, নিয়োগপত্র থাকা সত্ত্বেও, তাকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। চাঞ্চল্যকর দাবি সিবিআই সূত্রে।
এবিপি আনন্দর এক্সক্লুসিভ অন্তর্তদন্তে তেমনই প্রার্থীর হদিশ। এমনই দু’জন প্রার্থীকে খুঁজে বার করেছে এবিপি আনন্দ। এর মধ্যে একজন বীরভূমের বোলপুরের বাসিন্দা অরিন্দম মুখোপাধ্যায়। যিনি খয়রাশোলের বরা হাইস্কুলে গ্রুপ সি পদে নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন, 'এটা কষ্টের দাম, কতদিন এই ভাবে বঞ্চিত থাকবে তারা?' বকেয়া ডিএ মেটানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের দাবি, লকডাউনের সময় কাজে যোগ দিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, ওই পদে আগেই একজনকে নিয়োগ করা হয়ে গেছে। খয়রাশোলের বরা হাইস্কুলের টিচার-ইন-চার্জ কাঞ্চন সরকার বলেন, "এসেছিল। আমার দেখে সন্দেহ হয়েছিল। ওর কোনও মেল আসেনি স্কুলে। আগে মেল ঢোকে পর্ষদ থেকে। আরেকটা মেল আসে প্রার্থীর কাছে। ওই পোস্টে দু’জন ছিল তাদের মেল ছিল। তাই বলেছিলাম, জাল। দিতে পারব না।"
প্রায় একই রকমের অভিজ্ঞতা বীরভূমের সাঁইথিয়ার বাসিন্দা এই ব্যক্তির। তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের একটি স্কুলে গ্রুপ সি পদে নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন। তাঁরও অভিযোগ, নিয়োগপত্র পেয়ে, কাজে যোগ দিতে গিয়ে, তিনি দেখেন, সেই পদে একজন চাকরি করছে।
এরকম প্রার্থীর সংখ্যা শুধুমাত্র দু’জন নয়! সিবিআই সূত্রে দাবি, নিয়োগপত্র পেয়েও চাকরি জোটেনি, তদন্তে এরকম একাধিক প্রার্থীর হদিশ মিলেছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, সেই প্রার্থীরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে দেখেন, সেই পদে কেউ না কেউ কাজ করছেন। এরকম প্রার্থীদের বয়ানও রেকর্ড করা হয়েছে।
বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, সীমাহীন লোভের জেরেই কি এই ঘটনা? টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি করতে গিয়েই পদের সংখ্যাও মাথায় থাকেনি? নেপথ্যে কাদের কাদের হাত রয়েছে? তা-ই এখন খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে সিবিআই।