প্রকাশ সিনহা, পার্থপ্রতিম ঘোষ এবং সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এবার সিবিআই স্ক্যানারে এজেন্টদের ভূমিকা! গতকাল ধৃত এজেন্ট শেখ শাহিদ ইমামের থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলে সূত্রের খবর। শাহিদের দাবি, তিনি ফেঁসে গিয়েছেন। তাই সাক্ষী দেবেন। অন্যদিকে, চন্দন মণ্ডলকে জেরা করেও সামনে এসেছে নিয়োগ দুর্নীতির এজেন্ট চক্র সম্পর্কিত নয়া তথ্য! এমনটাই সূত্রের খবর।
কেউ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। মিউজিক ভিডিওতে অবধি মুখ দেখিয়েছেন! কেউ বেসরকারি স্কুলের মালিক! নিয়োগ-দুর্নীতির মামলায়, যে ৩ জন এজেন্টকে শুক্রবার সিবিআই গ্রেফতার করেছে তাঁদের সম্পর্কে সামনে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই প্রেক্ষাপটেই সাক্ষী দেওয়ার কথা বলে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন শাহিদ ইমাম নামে এক অভিযুক্ত। সিবিআই সূত্রে দাবি, চাকরি বিক্রির চক্রেও অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই এজেন্টদের। নিয়োগ দুর্নীতির বেআইনি চক্র কীভাবে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়েছে। তা নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছিলেন, সিবিআইয়ের প্রাক্তন যুগ্ম অধিকর্তা ও প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক উপেন বিশ্বাস।
ধৃত 'সৎ রঞ্জন' বা চন্দন মণ্ডলকে গ্রেফতারের পর জেরায় সেই দুর্নীতির জাল বা চক্র নিয়ে সামনে এল এই বিস্ফোরক তথ্য। সিবিআই সূত্রে দাবি, ধৃত রঞ্জনকে জেরা করে জানা গেছে, বাগদার সঙ্গে বিভিন্ন জেলায় সাব এজেন্ট নিয়োগ করেছিলেন চন্দন মণ্ডল। সাব এজেন্টরা মুখে মুখে প্রচার চালাতেন, টাকা দিলেই সরকারি চাকরি মিলবে। কোনও চাকরিপ্রার্থী সেই ফাঁদে পা দিলে, টাকার বিনিময়ে চাকরির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হত। টাকা পাওয়ার পর, সেইসব সাব এজেন্টরা সুপারিশ পাঠিয়ে দিতেন চন্দন মণ্ডলের কাছে।
আরও পড়ুন, সরকারি কর্মীদের ছুটিতে 'না', DA ইস্যুতে কর্মবিরতিতে পাল্টা নবান্ন
এই প্রেক্ষাপটে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে ফের সিবিআইয়ের স্ক্যানারে চলে এসেছেন ধৃত মিডলম্যান প্রসন্ন রায়। সিবিআই সূত্রে দাবি, চন্দন মণ্ডল-সহ ৬ এজেন্টই চাকরি বিক্রির টাকা পৌঁছে দিতেন প্রসন্ন রায়ের কাছে। এরকম ৫০ জন এজেন্টের হদিশ মিলেছে, যাঁরা নিয়োগ দুর্নীতির টাকা পাঠাত মিডলম্যান প্রসন্নকে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে দাবি, চন্দন মণ্ডলের অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা টাকা ঢুকত মিডলম্যান প্রসন্ন রায়ের অ্যাকাউন্টে। প্রসন্নর স্ত্রীর অ্যাকাউন্টেও টাকা ঢুকেছে চন্দন মণ্ডলের অ্যাকাউন্ট থেকে। কোনও কোনও চাকরিপ্রার্থী আবার সরাসরি প্রসন্নর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছেন বলেও সিবিআইয়ের দাবি।
সিবিআই সূত্রে দাবি, এখনও পর্যন্ত ২২টি অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেন নজরে এসেছে। প্রসন্ন রায় ও তাঁর আত্মীয়দের সাড়ে ৩০০টি সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এখন এইসব এজেন্টদেরই ভূমিকা খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। নবম-দশম নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুক্রবার কৌশিক ঘোষ, শেখ আলি ইমাম, ও শেখ শাহিদ ইমাম নামে তিনজন এজেন্টকে গ্রেফতার করে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে দাবি, ধৃতদের মধ্যে শাহিদ ইমামকে জেরা করে বিস্তারিত তথ্য ও নথি মিলেছে। এদিন আদালতে তোলার সময়, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করে, সাক্ষ্য দেওয়ার কথা বলেন শাহিদ। শাহিদ ইমামকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সূত্রের খবর, সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন এই শেখ শাহিদ। একটি মিউজিক ভিডিওতেও তাঁকে দেখা গেছে। এজেন্ট হিসেবে ধৃত মালদার ইংরেজবাজারের বাসিন্দা আব্দুল খালেক স্থানীয় মিল্কি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। বর্তমানে নগরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে রয়েছেন।এলাকায় তাঁর একটি বেসরকারি স্কুলও রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। আর এদিন আরও ১০ জন এজেন্টকে নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।