পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা : তাঁর মেয়াদকালে দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি রাখলেন জোরালো গলায়। পাশাপাশি তুললেন 'পদ্ধতিগত ত্রুটি', 'স্ক্যান সই'ব্যবহারের প্রসঙ্গ। সবমিলিয়ে সিবিআইয়ের (CBI) দীর্ঘ জেরার পর কিছুটা যেন সুর নরম এসএসসি- প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যের। যদিও সিবিআইয়ের ওপর আস্থা রেখে তাঁদের তদন্ত সঠিক পথে এগোচ্ছে বলেও দাবি করেছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
কলকাতা এসে সুর নরম সুবীরেশের
স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে সিবিআইয়ের ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর বৃহস্পতিবার কলকাতায় আসেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য (Subiresh Bhattacharya)। কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে তিনি দাবি করেন, 'আমার আমলে কোনও দুর্নীতি হয়নি'। পাশাপাশি সিবিআইয়ের উদ্দেশে খোঁচার সুরে জানান, 'ওরা কী খুঁজে পেয়েছে ওদেরই জিজ্ঞাসা করুন।' গতকাল প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে তাঁর বাড়ি ও অফিসে চলে অভিযান, দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চালায় সিবিআই। সিল করে দেওয়া হয় বাঁশদ্রোণীর ব্রহ্মপুরের ফ্ল্যাট। তল্লাশি চলে সুবীরেশ ভট্টাচার্যের উত্তরবঙ্গের বাংলো ও অফিসেও।
ব্রহ্মপুরের সিল করা ফ্ল্যাটে পৌঁছে সুবীরেশ ভট্টাচার্য এসএসিতে তাঁর আমলে কোনও দুর্নীতি হয়নি বলে দাবিতে অনড় থাকার পাশাপাশি বলেন, 'সিবিআই তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে। সমস্ত সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে।' সঙ্গে তাঁর দাবি, 'স্ক্যান সিগনেচার হাজার হাজার মার্কশিটে ব্যবহার হয়, অন্য কোথায় ব্যবহার হয়েছে বলতে পারব না।' যে প্রসঙ্গে তিনি কী সই-জালের আশঙ্কা করছেন জানতে চাইলে এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যানের দাবি, 'বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই না। সিবিআইকে যা বলার বলব।'
ব্রহ্মপুরের ফ্ল্যাটে স্ক্যান সিগনেচারের প্রসঙ্গে তোলার আগে বালিগঞ্জের বাড়িতে পদ্ধতিগত ত্রুটির প্রসঙ্গ সামনে আনেন তিনি। সুর নরম করে সেখানে সুবীরেশ ভট্টাচার্য বলেন, 'প্রোসিডিওরাল মিসটেক ছিল সম্ভাবত', অর্থাৎ পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকতে পারে।
তদন্ত যেখানে...
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পদক্ষেপ করা উচিত। বাগ কমিটির রিপোর্টে আরও বলা হয়, কমিশনের প্রোগ্রাম অফিসার সমরজিৎ আচার্য জানিয়েছেন, কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তিনি যেন আঞ্চলিক কমিশনের চেয়ারম্যানদের সই সংগ্রহ করে স্ক্যান করেন এবং সেই স্ক্যান করা সই কমিশনের অ্যাপ্লিকেশন সার্ভারে সংরক্ষণ করেন, যাতে পরবর্তীকালে সেই সইগুলো গ্রুপ-D পদের সুপারিশপত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করা যায়।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় সুবীরেশ ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, স্বাক্ষর সংগ্রহ করা এবং স্ক্যান করে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক কমিশনের চেয়ারম্যানরাই নিয়েছিলেন। এবিষয়ে কমিশনের কোনও বোর্ড মিটিং হয়নি। এর মধ্যে এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সূত্রের খবর, নিউটাউনে সিবিআইয়ের হাতে যিনি গ্রেফতার হয়েছেন সেই অভিযুক্ত ‘মিডলম্যান’-র নাম প্রদীপ সিংহ। নবম-দশমে শিক্ষকের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রচুর টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রসঙ্গত, স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে ইতিমধ্যেই SSC’র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা ও প্রাক্তন সচিব অশোক সাহাকে গ্রেফতার করেছে CBI। ED গ্রেফতার করেছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে।
আরও পড়ুন- পুজো অনুদান নিয়ে আপত্তি, হাইকোর্টে দায়ের তৃতীয় মামলা