সৌভিক মজুমদার, কলকাতা : SSC-র প্রায় ২৬ হাজার চাকরিজীবীর ভবিষ্যৎ কী? কলকাতা হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ২০১৬ সালের পুরো প্যানেলটাই কি বাতিল হয়ে যাবে? তাঁর চাকরিটাও কি আর থাকবে না ? নাকি বৈধ ও অবৈধ চাকরিজীবীদের আলাদা করে রায় দেবে আদালত? চাকরিটা বহাল থাকবে তো? এসব প্রশ্নগুলো অনেকদিন ধরেই মাথার মধ্যে ঘুরত। পরিবার তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে। তাই চিন্তাটাও ছিল বেশ। চাকরি হাইকোর্টে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে ২৭ ডিসেম্বর থেকে আন্দোলন করছিলেন প্রশান্ত দাস।  দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপের মহেন্দ্রগঞ্জ হাইস্কুলে ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষক। না আন্দোলনের পরিণতি কী হল, শীর্ষ আদালতের নির্দেশে তাঁর চাকরিটা কি বহাল থাকল? জানা হল না। শীর্ষ আদালতে পরবর্তী শুনানির আগেই প্রাণ চলে গেল আন্দোলনরত এক শিক্ষকের। 


ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন পুরো প্যানেল বাতিলের বিরুদ্ধে।  দাবি ছিল শুধু অযোগ্যদের প্যানেল থেকে বাদ দিতে হবে।  কিন্তু মামলার ভবিষ্যৎ না জেনেই শিক্ষকের মৃত্যু নতুন বিতর্কের জন্ম দিল। 


প্রশান্তের সহকর্মীরা বলছেন, মৃত শিক্ষক প্রশান্ত দাস প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন । চাকরিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় বাড়ছিল সুগার ও রক্তচাপ। কিন্তু তা সত্ত্বেও হাল ছাড়েননি। কলকাতায় এসে আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু মামলার ফয়সালা  হওয়ার আগেই চলে গেলেন তিনি। 


হাইকোর্টে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে আন্দোলন করছিলেন তিনি। কিন্তু গত ৭ তারিখ SSC-র চাকরি বাতিল মামলার শুনানি মুলতুবি হয়ে গেলে মুষড়ে পড়েন তিনি, জানাচ্ছেন সহযোগীরা।   ১৫ জানুয়ারি ২টোর সময় ফের এই মামলার শুনানি হবে। তবে তথন আদালতের পর্যবেক্ষণ শোনার জন্য প্রশান্ত বাবু আর রইলেন না। 


২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল ২০১৬ সালের পুরো প্য়ানেল বাতিল করে দেয় হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। তারপরই অকুল পাথারে পড়েন চাকরিরত ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক। হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার, SSC এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয় চাকরিহারাদের একাংশও। 


সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় প্রশান্তর  চিন্তা আরও বেড়েছিল বলে দাবি করেছেন আন্দোলনরত অন্যান্য শিক্ষকরা। প্রশান্তও দাবি করে এসেছেন,  শুধু অযোগ্যদের প্যানেল থেকে বাদ দিতে হবে, যোগ্যদের চাকরি বহাল রাখতে হবে। 


 গত ২ জানুয়ারি প্রশান্ত দাস বিকাশ ভবন অভিযান গেছিলেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বিকাশ ভবন অভিযানের পরে প্রশান্ত বাড়ি চলে যান। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে তমলুকের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়। কর্মহীন হয়ে পড়লে পরিবারের ভবিষ্যত নিয়ে আতঙ্কিত ছিলেন  দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপের মহেন্দ্রগঞ্জ হাইস্কুলের শিক্ষক। জানালেন অন্যান্য আন্দোলনকারীরা। 


আরও পড়ুন :  গঙ্গাসাগরে মকরস্নানে সমাগম কপিল মুনির আশ্রম ঘিরেই, কে এই কপিলমুনি?