সমীরণ পাল, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও দীপক ঘোষ, কলকাতা: পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একাধিকবার ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা। এবার বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে গোপাল সাহাকে ধমক দিলেন সৌগত রায়। সেই ভিডিও ইতিমধ্য়েই ভাইরাল। খোদ সাংসদই তুললেন তৃণমূল পরিচালিত কামারহাটি পুরসভা থেকে পুর-পরিষেবা না মেলার অভিযোগ। সৌগত রায়ের মুখে শোনা গেল পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার তমাল দত্তর নামও। সাংসদের প্রশ্ন, তমাল দত্ত কোন মহাপুরুষ যে পুরসভা থেকে কোনও পরিষেবা পেতে গেলে তাঁর অনুমতি নিতে হয়? সৌগত রায়ের মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষের সুর বাম-বিজেপির। তবে গোপালের পাশে দাঁড়িয়ে সৌগতকে তিরস্কার করেছে মদন মিত্র। 


বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান থেকে কামারহাটির চেয়ারম্যান ও তৃণমূল নেতা গোপাল সাহাকে ভর্ৎসনা করেছিলেন সৌগত রায়! এবার দুর্নীতি ইস্যুতে পাল্টা তাঁকে আক্রমণ শানালেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। তাঁর বিরুদ্ধে রিগিংয়ের অভিযোগও তুললেন মদন। হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেন দমদমের তৃণমূল সাংসদের দলবদলের জল্পনা। যদিও এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি সৌগত রায়।  


রেশন দুর্নীতিতে ধৃত প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পাশে দাঁড়ালেও পুর দুর্নীতিতে একাধিকবার ED-র জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়া তৃণমূল পরিচালিত কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহাকে নিশানা করলেন দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। আর তার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই দলেরই সাংসদকে পাল্টা নিশানা করলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র।

মদন মিত্র এদিন সৌগতকে কটাক্ষ করে বলেন, 'আপনি তো গোপালের ঘরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে থাকতেন। এখন যেই ইডি ডাকল গোপালকে, তখন আপনার মনে হল, ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি তো কলা খাইনি। ৭৭-এ আপনি যা রিগিং করেছিলেন, এসডিপিওকে সরাে হয়েছিল। তারপর থেকে ব্যারাকপুর হাতছাড়া হয়ে যায়'।

পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে ইতিমধ্যে গোপাল সাহাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাঁর বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।মঙ্গলবার বেলঘরিয়ায় কামারহাটি পুরসভার বিজয়া সম্মিলনীতে উপস্থিত হন সৌগত রায়। সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চেই তৃণমূল সাংসদের বক্তব্য ভাইরাল হয়।

মদন মিত্র এদিন আরও বলেন, '১৫ বছরে এমন ১০টা ছেলেকে দাঁড় করাতে পারবেন আপনি, যে আপনার থেকে সাহায্য পেয়েছে বা মানুষ সাহায্য পেয়েছে? আপনার ডানদিকে বা দিকে যেগুলো বসেছিলেন, যাঁদের নিয়ে ঘোরেন, তাঁদের মধ্যে তো অর্ধেক চোরগুলো বসে আছে। হঠাৎ এরকম মেরুকরণে গিরগিটির মতো রংটা বদলাচ্ছেন কেন?' তাঁর কথায়, উনি পিসি সরকারের ম্যাজিকের মতো পোলভল্ট খেতে পারেন। ১৮০ ডিগ্রি যখন তখন। দলের ভিতর থেকে, দলের খেয়ে দলের পরে, মাঝে মাঝেই চান্স পেলে একটু করে দলের পিছনে পিনবাজি, এরকম আপনাদের মধ্যে ২-১ জন এমপি আছে। স্পেশিফিক কিছু না পেলে মদন মিত্র মুখ খুলত না। সৌগত রায়ের বলার স্টাইল ও টাইমিংটা যেন কোথাও একটা লেবুতলা পার্ক ভায়া হয়ে যেন রামমন্দিরের পুজোর দিকে এগোচ্ছে। কিচ্ছু এসে যায় না। তুড়ি মারব উড়ে যাবে'।

যদিও মদন মিত্রের আক্রমণ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি সৌগত রায়। কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র। আবার সৌগত রায়ের দমদম লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই হচ্ছে কামারহাটি বিধানসভা! আর তৃণমূলের সাংসদ ও বিধায়কের কোন্দল ঘিরে চূড়ান্ত ডামাডোল।