সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খাওয়ার পরে অবশেষে বাহিনী নিয়ে ঘুম ভাঙল কমিশনের। সূত্রের খবর,  প্রতি জেলায় সম্ভবত ২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইতে চলেছে কমিশন। উত্তেজনাপ্রবণ-অতি সংবেদনশীল এলাকার জন্যও আরও বাহিনী চাইতে পারে কমিশন। কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে অবশেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে চিঠি দিচ্ছে কমিশন। সর্বত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করার নির্দেশ আদালতের। অথচ প্রতি জেলায় মাত্র ১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সিদ্ধান্ত রাজ্য নির্বাচন কমিশনের রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি রাজ্যের বিশেষ বাহিনী ব্যবহার করা হবে ভোটে।


পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় বাহিনী-মামলায় সুপ্রিম কোর্টে জোর ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য। পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। ১৫ জুনের সেই নির্দেশই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ রাজ্য ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় বাহিনী-বিরোধিতার আবেদন। পঞ্চায়েত ভোটে সর্বত্র মোতায়েন থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী, নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। হাইকোর্টের সেই নির্দেশে হস্তক্ষেপ করতে আমরা আগ্রহী নই। তাই কমিশন ও রাজ্যের স্পেশাল লিভ পিটিশন খারিজ করা হল। রাজ্যের আবেদন খারিজ করে জানায়  সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি ভি নাগরত্ন ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর ডিভিশন বেঞ্চ। 


২০১৩-র পর এবার ২০২৩। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্যে আরও একটা পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি করে, কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। মামলায় যুক্ত হতে চেয়ে আবেদন করেন কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরিও। কিন্তু, তাঁকে মামলায় যুক্ত না করে, বক্তব্য শুনেছিল কলকাতা হাইকোর্ট।



এই মামলায় ১৩ জুন,কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে হবে পঞ্চায়েত ভোট। নির্দেশে বলা হয়,আপাতত স্পর্শকাতর জেলাগুলিতে মোতায়েন করতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। পরে, রাজ্য় সরকারের দেওয়া রিপোর্ট পর্যালোচনা করে, যেখানে রাজ্য় পুলিশের অপ্রতুলতা থাকবে সেখানে কমিশনকে আধা সামরিক বাহিনী অবিলম্বে মোতায়েন করতে হবে। এরপরই, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার।


এরপরই গত বৃহস্পতিবার,পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত রায়ের এই অংশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। এই মামলায়, রাজ্য় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় অত্য়ন্ত ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নির্দেশে বলেন, শুধু স্পর্শকাতর জেলায় নয়, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে সব জেলাতেই মোতায়েন থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। অবিলম্বে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানাতে নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।


৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বাহিনী চেয়ে আবেদন করতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশকে। নির্দেশে প্রধান বিচারপতি আরও বলেছেন যে, রাজ্য নির্বাচন কমিশন বাহিনী চাইলে, তৎক্ষণাৎ কেন্দ্রীয় সরকারকে বাহিনী দিতে হবে। বাহিনীর খরচ বহন করবে কেন্দ্রীয় সরকার। এরপরই, কাকদ্বীপ থেকে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে পাশে দাঁড় করিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।


 


প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মানার কথা বলা হলেও, পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এরপরই, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের বিরোধিতায় সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকার। এই মামলায়, সোমবার কার্যত কড়া মনোভাবই প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি এম এম সুন্দরেশ বলেন, কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনীর কথা বলেছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের জায়গায় সেই ব্যবস্থা রাজ্য সরকার করতে পারে।আপনাদের যদি বেশি সময় লাগে, তাহলে আবার কলকাতা হাইকোর্টে সেটা জানাতে পারতেন। এরপর মঙ্গলবার, হাইকোর্টের রায়ই বজায় রাখল সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশে আনতে হল কেন্দ্রীয় বাহিনী।